মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল,
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মির্জাপুর থেকে মাদক নির্মুল করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে চলছে এই অভিযান। পুলিশের চিরুনী অভিযানে অনেক মাদক কারবারীরা এখন এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। চাঞ্চল্যকর মার্ডার মামলার রহস্য উৎঘাটন এবং আসামী গ্রেফতার হয়েছে। চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতি মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার হয়েছে। মির্জাপুর থানা পুলিশ বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার এবং কয়েক শতাধিক মাদক কারবারীকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জেল পরিমানা করেছেন। মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম আজ বুধবার (১৬ নভেম্বর) জানিয়েছেন মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে। মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া চাঞ্চল্যকর অধিকাংশ মার্ডার মামলার রহস্য উৎঘাটনসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্পপ্ট মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়ে আসছিল। মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, গোড়াই, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের শতাধিক স্পপ্ট উল্লেখযোগ্য। পাঁচজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এলাকাবাসির মধ্যে পাঁচজন ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, মাদক কারবারীদের হাতে যেন এলাকাবাসি জিম্মি। মাদকের টাকার জন্য উঠতি বয়সী যুব সমাজ নানা অপরাধে জড়িয়ে পরছে।
এদিকে মির্জাপুর থানার বর্তমান ওসি যোগদানের পর মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষনা দিয়ে সাঁড়াশি অভিযানে নামেন। গত তিন চার মাসের ব্যবধানে মির্জাপুর পৌরসভা এবং ১৪ ইউনিয়নে অভিযানে কয়েক শতাধিক মাদক কারবারীকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জেল দিয়েছেন। এ সময় বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। এছাড়া চাঞ্চল্যকর মার্ডার মামলার রহস্য উৎঘাটন এবং আসামী গ্রেফতার হয়েছে। চুরি ছিনতাই এবং ডাকাতি মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতার হয়েছে। সম্প্রতি পৌরসভার পুষ্টকামুরী ডাক বাংলো এবং পুষ্টকামুরী সওদাগড়পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৫ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জেল দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মাদক কারবারীরা হচ্ছে শাহাজাদা, সেলিম, পিন্টু, শফিক, হিরু, রুবেল, মজনু, সৌরভ, সেলিম, আহাম্মদ, শফিকুল, খিজির, মোজ্জল, আন্নাছ, জামিল, সাগর, রুৎফর, রবিন শেখ, রুবেল, আবু জব্বার, নাসির, শরীফ, শিপন, জুলহাস, জীবন, লিটন ও রবিউল।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম জানান, ১৪ ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এরাকা এবং পুষ্টকামুরী ডাক বাংলো, সাহাপাড়া, বাইমহাটি, মির্জাপুর বাজার, পুষ্টকামুরী সওদাগর পাড়া, গারাইল ও বাওয়ারকুমারজানি গ্রামের কিছু অংশসহ পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডের অর্ধশত সম্পট মাদক পল্লী হিসেবে পরিচিত ছিল। মাদক নির্মুলে ৩০-৩৫ জন পুলিশ সদস্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমানের নির্দেশনা ও পরামর্শে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং ওসি (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন মাদক পল্লীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের মাদকসহ কয়েক শতাধিককে গ্রেফতার করা হয়। মোবাইল কোর্টের বিচারক মাদক কারবারীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মির্জাপুরে আইন-শৃঙ্খলা অতিতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল রয়েছে।
এ ব্যাপারে মোবাইল কোর্টের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রে মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এলাকাকে মাদক মুক্ত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন। মাদক কারবারীদের গ্রেফতারের পর সরকারী বিধিমোতাবেক তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করে জেল হাজতে পাঠানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এলাকা থেকে মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, মাদক এবং ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোন আপোষ হবে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।