মির্জাপুরে বালু বাণিজ্যে আ. লীগ ও বিএনপি একাট্টা

মোঃ সাজজাত হোসেন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা একত্রিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বংশাই ও লৌহজং নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জনবসতি এলাকাসহ আবাদি জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্তরা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার গোড়াই, লতিফপুর ,ফতেপুর,আজগানা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বংশাই নদী ও মির্জাপুর পৌরসভা, বহুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন পাশদিয়ে লৌহজং নদী। নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। চরে আবাদি জমিসহ গড়ে উঠেছে জনবসতি। কয়েকটি চর এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে খনন যন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এই বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ২০ নেতা একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা ও উপজেলা শ্রমিকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.আবুল হোসেন ।

কমিটির প্রধান উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর মো.আবুল হোসেন খনন যন্ত্র দিয়ে বালু তুলে তা বিক্রি করেন। এই কমিটির প্রভাবশালী আরো এক নেতা উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর মৃধা । তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে থাকেন বলে জানা গেছে। প্রতিদিন প্রায় ১২০ টি খনন যন্ত্র দিয়ে চর থেকে কোটি কোটি টাকার বালু তুলছেন তাঁরা। এই বালু বংশাই ও লৌহজং নদী পাশের এলাকায় মজুদ করা হয়। সেখান থেকে প্রতি ট্রাক বালু দুই-চার হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আপাতত বালু তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বর্তমানে অন্য এলাকার ব্যবসায়ীরা নদীর চরের বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’

উপজেলা শ্রমিকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.আবুল হোসেন বালু তোলার কথা স্বীকার করে বলেন, আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বালু উত্তোলন করতেছি। প্রভাবশালী মহল আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রশাসনের নাম গোপন রাখতে বলছে। । তবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো।

ছাত্রদল নেতা তমাল মৃধা ও বিএনপি নেতা এবাদত মৃধা বলেন, ‘আমরা আগে বালু তোলার প্রতিবাদ করে কোনো প্রতিকার পাইনি। তাঁরা আমাদের জমি থেকে বালু তুলে নিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা নেওয়া হয়।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মির্জাপুরে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিবাদ করে অতীতে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখন তাই কেউ আর সাহস করেন না। গণমাধ্যমে কথা বললেও প্রভাবশালী মহল চড়াও হয়।

মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.হাফিজুর রহমান বলেন, বংশাই ও লৌহজং নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই। এর আগে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, এলাকার ক্ষতি করে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবেন না। আমি ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছি। জনস্বার্থে যা যা করণীয়, তা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here