মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
স্বামীর বাড়ি থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ওয়ার্শি ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামে বাবার বাড়ি বেড়াতে এসে প্রসাধী রানী সরকার (৪০) নামে গৃহবধু মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পরে দেড় বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। থানায় মানব পাচারের লিখিত অভিযোগ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবূ্যুনালে মামলার পরও সাধনী রাণীর কোন সন্ধান করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার পরিবারের দাবী মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাকে হত্যা করেছে। এদিকে মাকে ফিরে পেতে প্রসাধী রানীর দুই পুত্র সাগর ও সীমান্ত এবং স্বামী পরিতোষ সরকার দ্ধারে দ্ধারে ঘুরছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার (২৬ মে) নিখোঁজ প্রসাধী রাণীর স্বামী পরিতোষ সরকার এবং দুই পুত্র সাগর ও সীমান্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রসাধী রানী সরকারের পিতার নাম নরেশ চন্দ্র সরকার। গ্রামের বাড়ি ওয়ার্শি ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামে। গত ২০ বছর পুর্বে কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালি গ্রামের পরিতোষ সরকারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে সাগর ও সীমান্ত নামে দুই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বড় ছেলে সাগরের বয়স এখন ১৮ এবং ছোট ছেলে সীমান্তের বয়স ১৫ বছর। স্বামী-স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান নিয়ে তাদের সুখের সংসারই ছিল। প্রসাধী রানীর স্বামী পরিতোষ সরকার অভিযোগ করেন, তাদের ্েই সুকের সংসারে বাঁধ সাজে শান্তিরাম সরকার নামে এক লম্ফট। তার স্ত্রীকে নানা প্রলোভনে বিরক্ত করতে থাকে এই শান্তিরাম সরকার। এ বিষয়ে তাকে শাসন করলেও তিনি অসহায় পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি এবং পরিতোষসহ তার দুই পুত্রকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রসাধী রানী সরকার মির্জাপুর উপজেলার মৈশামুড়া গ্রামে বাবার বাড়ি আসে বেড়াতে। ঐ দিন দুপুরে বাবার বাড়ি থেকে আন্তজেলা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালি গ্রামের সাগর সিকদারের ছেলে শান্তিরাম সিকদার, নরেন্দ্র সরকারের ছেলে প্রদীপ কুমার সুত্রধর ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কাচারি বাজার এলাকার আব্দুল রেজিত মিয়ার ছেলে হাসমত আলীসহ ৪-৫ জন মিলে প্রসাধী রানী সরকারকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তুলে নিয়ে যায়। তার কোন সন্ধান না পেয়ে প্রসাধী রানীর অসহায় মা পুষ্প রানী সরকার ও স্বামী পরিতোষ সরকার বাদী হয়ে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ও ২২ ফেব্রুয়ারী মির্জাপুর থানায় শান্তিরাম সিকদার, প্রদীপ কুমার সুত্রধর ও হাসমত আলীর নাম উল্লেখ করে মানব পাচারের দুটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরও থানা পুলিশ প্রসাধী রানী সরকারের কোন সন্ধান করতে পারেনি। ঘটনার সঙ্গে মানব পাচারকারী শান্তিরাম সিকদার, প্রদীপ কুমার সুত্রধর এবং হাসমত আলীকে গ্রেফতার এবং প্রসাধী রানী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধারের দাবীতে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার স্বামী পরিতোষ সরকার টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবূ্যুনালে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১০৫/২০২২।
এদিকে মামলার পর আদালতের বিচারক মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য সিআইডি এবং পিবিআইকে নির্দেশ দেন। সিআইডি মামলাটি নিয়ে গড়িমসি করায় টাঙ্গাইলের পিবিআই মামলাটি দীর্ঘ দিন তদন্ত করেও আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারেনি। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন ভিকটিমকে উদ্ধার না করেই এবং আসামীদের গ্রেফতারের কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে বাদী পরিতোষ সরকার অভিযোগ করেন।
অপর দিকে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য শান্তিরাম, প্রদীপ ও হাসমত এলাকায় বীরদর্পে ঘুরাফেরা করে মামলার বাদী অসহায় পরিতোষ সরকার, শ^াশুরী পুষ্প রানী সরকার এবং দুই পুত্র সাগর ও সীমান্তকে প্রাণ নামের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের চাপের মুখে ও হুমকিতে অসহায় পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অসহায় পরিবারটি সাধনী রানী সরকারকে উদ্ধার এবং আন্তজেলা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য শান্তিরাম, প্রদীপ ও হাসমত ্আলীকে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শান্তির দাবী জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে বিস্তারিত জানার জন্য যোগ করা হেল তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা মামলাটি তদন্ত করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা য়ায়নি এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
মির্জাপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, অনেক দিন আগের ঘটনা। পরিবারের অভিযোগের পর মির্জাপুর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। তদন্ত করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সাধনী রাণীর পরিবার কোর্টের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন। এখনও যদি তার পরিবার সহায়তা চান পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্তক সহযোগিতা দেওয়া হবে।