মির্জাপুরে নৌকার টিকেট পেতে হাফ ডজন নেতার গণসংযোগে সরগরম রাজনীতির মাঠ॥ সুযোগের অপেক্ষায় বিএনপি

মীর আনোয়ারর হোসেন টুটুল
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৩৬, টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে নৌকার টিকেট পেতে আওয়ামীলীগের হাফ ডজন নেতা ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছে। একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন। টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের আওয়ামীলীগের দুর্গ ভাঙ্গতে বিএনপি বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। দলীয় টিকেট নিশ্চিত করতে হ্যাবিওয়েট প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্ধারে দ্ধারে ঘুরছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি এমপি প্রার্থীরা নিজ এলাকায় বিভিন্ন দলীয় ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াও কর্মীসভা, উঠান বৈঠক, খেলাধুলা, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গনসংযোগ করে নিজেদের প্রার্থী ঘোষনা করছেন। দিনরাত চলছে হ্যাবিওয়েট এমপি প্রার্থীদের গণসংযোগ। তারা ভোটারদের কাছে দোয়া চেয়ে আগামী দিনে তাদের পাশে থেকে কাজ করার উন্নয়ন মুলক নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুরে রাজনৈতিক অংগন বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে মির্জাপুর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন রাাজনৈতিক দলের এমপি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানা গেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে এমপি প্রার্থীরা হচ্ছেন বর্তমান সাংসদ ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা একুশে পদকপ্রাপ্ত ফজলুর রহমান খান ফারুকের পুত্র জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপি, মির্জাপুর উপজেলা আওায়ামীলীগের সভাপতি, মা ফাতেমা স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক ভিপি মীর শরীফ মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও প্রয়াত চার বারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. একাব্বর হোসেনের পুত্র ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, উপজেলা আওায়ামীলীগের সহসভাপতি ও হংকং শাখা আওয়ামীলীগের সভাপতি শিল্পপতি আলহাজ¦ আবুল কালাম আজাদ লিটন, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য ও মধুমতি ব্যাংকের স্পন্সর ডাইরেক্টর এবং ইবিএল গ্রুপের চেয়ারম্যান রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি, আওয়ামীলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের সাধারন সম্পাদক মেজর (অব.) ড. খন্দকার এ হাফিজ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল, সাবেক এমপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির মহসীন হলের সাবেক জিএস মো. সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাব, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম জহির, ভাইস চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসরাম নুরু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি কমরেড গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান খান সিটু এবং কৃষক শ্রমিক জনতালীগের মির্জাপুর উপজেরা শাখার সাধারন সম্পাদক মো. আরমান হোসেন তালুকদার তাপসের নামও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে এমপি পদে নির্বাচন করবেন শ্রী মতি রুপা রায় চৌধুরী ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে এমেপি পদে নির্বাচনের জন্য বর্তমান এমপি খান আহমেদ শুভ ছাড়াও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের হাফ ডজন প্রার্থী ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। দিন রাত রাতা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটাদের বাড়ি বাড়ি। পাশাপাশি সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দুইজন হ্যাবিওয়েট প্রার্থীও মাঠে কাজ করছেন। বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পাটির্ , বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, খেলাফত মসলিস এবং কৃষক শ্রমিক জনতালীগ সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপর নির্বাচনী এলাকা একটি গুরুত্বপুর্ন আসন। এখানে এক সময় জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপি দখলে নিয়ে শাসন চালিয়েছেন। জাপা ও বিএনপির দুর্গ ভেঙ্গে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ্ই আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে ্আসে। টানা চার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. একাব্বর হোসেন। তিনি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট, রাস্তা-ঘাটসহ প্রতিটি ক্ষেত্র্ইে সুষম উন্নয়ন করেছিলেন। ২০২১ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে নৌকার টিকেটে এমপি নির্বাচিত হন খান আহমেদ শুভ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গত দুই বছরে তিনি প্রতিটি এরাকায় সুষম উন্নয় অব্যহৃত রেখেছেন। দিন রাত জনগন সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার দৃর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
অপর দিকে আওয়ামীলীগের হাফ ডজন নেতা এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকাায় কর্মীসভা, উঠান বৈঠক, সরকারের উন্নয়নের প্রচারনা ও সভা সমাবেশ করে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তাদের এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় ভাবে কোনঠাসা হয়ে পরেছে দলটি। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করায় সাধারন ভোটারগন পরেছেন বেকায়দায়। দলের মধ্যে বেড়েছে দুরত্ব। দল যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন বিএনপি নির্বাচনে এলে ফলে এই আসনটি টিকিয়ে রাখা কষ্টকর বলে দলীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
এদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা দলীয় কোন্দল মিঠিয়ে আওয়ামীলীগের দুর্গ ভাঙ্গতে চায়। বিএনপির নেতাদের দাবী দল যাকেই মনোয়ন দিবে তারা এক হয়ে কাজ করবে। এ জন্য পৌরসভা ও বিভিন্ন ই্উনিয়নে কমিটি গঠনসহ গণসসংযোগ করে যাচ্ছেন বলে বিএনপির দলীয় সুত্র জানিয়েছে। পাশাপাাশি জাতীয় পার্টি, খেলাফত মসলিস, কৃষক শ্রমিক জনতালীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরাও এললাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারের বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা ফজললুর রহমান কান ফারুক জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক গনপরিষদ সদস্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত। টাঙ্গাইলের আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে তিনিই টিকিয়ে রেখেছেন। আওয়ামীলীগ একটি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের মত বিরোধ থাকলেও ভোটের সময় কারও মতবিরোধ নেই। বর্তমান সরকারের আমলে গত দুই বছরে মির্জাপুরে যে উন্ননয়ন হয়েছে, দেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা হয়নি। আমার বিশ্বাস আগামীতে আমি মনোয়ন পেলে মির্জাপুরকে একটি আদর্শ ও মডেল হিসেবে উপহার দিতে পারবো।
মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, আমার পরিবারটি মুলত আওয়ামীলীগের। বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের রাজনীতিরি সঙ্গে ৪৪ বছর পার করেছি। কলেজের ভিপি, বিআরডিবির চেয়ারম্যান, দীর্ঘ দিন দলের সাধারন সম্পাদক ও বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। তৃণমুলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অত্যান্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। আমার বিশ^াস এ বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ নেত্রী এবং দল আমার কাজের মুল্যায়ন করবেন।
ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত বলেন, আমার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ একাব্বর হোসেন এই আসনের চার বারের এমপি ছিলেন। আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে তিনি অনেক ত্যাগ ও সংগ্রাম করে নেত্রীকে এই আসনটি উপহার দিয়েছিলেন। এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগকে তিনিই সুসংগঠিত করেছেন। বাবার আদর্শকে ধরে রাখতে ও তরুণ হিসেবে দলীয় নেতাকর্মী, সাধারন জনগন এবং ভোটারগন আমাকেই এমপি হিসেবে যাচ্ছেন। আশা করছি দল ও প্রধানমন্ত্রী আমাকেই নৌকার টিকেট দিবেন। মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশা করেছেন শিল্পপতি আলহাজ¦ আবুল কালাম আজাদ লিটন, রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি ও মেজর (অব.) ড. খন্দকার এ হাফিজ। তাদের বক্তব্য দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগন নতুন মুখ যাচ্ছেন।
বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বলেন, নির্দলীয় তত্বাবদায়ক সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে মির্জাপুরের উন্নয়নের স্বার্থেই দল আমাকে অবশই মনোয়ন দিবেন। আওয়ামীলীগের মধ্যে নানা সমালোচনা রয়েছে। জনগণ চায় নতুন সরকার ও নতুন মুখ। মির্জাপুরে বিএনপির মধ্যে কোন কোন্দল নেই। কাজেই জয়ের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী। মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশার কথা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা সাইদুর রহামন সাইদ সোহরাব।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফা বেগম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় তাদের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here