নৌকায় ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
নৌকায় ভোট না দিলে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার কঠোর হুমকি দিয়েছে বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ মিয়া। চেয়ারম্যানের এই হুমকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম আতংক। উপজেলা আওয়ামীলীগের সবাপতি মীর শরীফ মাহমুদসহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দসহ ও এলাকার সাধারণ ভোটারগন বিতর্কিত এই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার তিন নং ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া ভোটারদের ভয়ভিতি দেখিয়ে এই বক্তব্য দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছে।
আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ফতেপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০ মুসুল্লি এবং আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সমর্থিত ১৫ জন নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, গতকাল মঙ্গলবার ছিল ফতেপুর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল। অনুষ্ঠানে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী ধর্মীয় শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নানের সভাপেিত্ব প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া। বক্তৃতায় চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা জানেন সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন খান আহমেদ শুভকে। তিনি বর্তমান এমপি। অপর দিকে আওয়ামীলীগের দুই জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা বয়স্ক ব্যক্তি মীর এনায়েত হোসেন মন্টু একজন অসুস্থ্য ও মানুষিক ভারসাম্যহিন। তাকে ভোট দিলে এলাকায় কোন উন্নয়ন হবে না। অপর প্রার্থী সানি নতুন মুখ। ভোটরদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন আপনাদের ভোট দিতে হলে নৌকার প্রার্থী খান আহমেদ শুভকে দিতে হবে। যদি নৌকায় ভোট না দেন তাহলে আপনাদের ভোট কেন্দ্রে আসার দরকার নেই। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপির ভোটারদের কোন ভাবেই ভোট কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হবে না। তার বক্তব্য শোনার পর মুসুল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে তিনি ওয়াজ মাহফিল ত্যাগ করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য আজ বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, আব্দুর রউফ মিয়া ছিলেণ ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ২০১৭ সালে বিএনপি থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। পরে তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। তিনি বিএনপির জালাও পোড়ায় মামলার আসামী। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি সরকার বিরোধী নানা বক্তব্য দিয়ে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় মামলাও হয়েছে। তারপরও তার অপকর্ম থেকে থাকেনি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে একতাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকেই তিনি ফোন বন্ধ করে পলাতক রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউপ যে বক্তব্য দিয়েছেন এটি খুবই নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, সরকার যাচ্ছেন সুষ্ঠু শান্তিপুর্ন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। প্রশাসনও সে দিক লক্ষ করে সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ইউপি চেয়ারম্যান কখনো ভোটারদের হুমকি ও ভয়ভিতি দেখাতে পারেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকার লোকজনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনেছি। এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. কায়ছারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু শান্তিপুর্ন ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করাই আমাদের মুল লক্ষ ও উদ্দেশ্য। একজন জনপ্রতিনিধি ভোটারদের ভয়ভিতি ও হুমকি দিতে পারেন না। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here