মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াপ্রতারক সেই মো. হারুন অর রশিদকে দুই দিনের রিমান্ডে এনেছেন পুলিশ। আজ রবিবার (২৬ মে) মির্জাপুর থানা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে ম্যাজিষ্ট্রেট দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মির্জাপুর থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে প্রতাররনার শিকার ভুক্তভোগি তরুন তরুনীরা হারুন অর রশিদকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। প্রতারক হারুন অর রশিদের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের চুয়াত্তর (চরগুগি) গ্রামে। গত মঙ্গলবার (২১ মে) মির্জাপুর উপজেলার পাশ^বর্তী দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি গ্রামের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। প্রতারনার শিকার ও ভুক্তভোগি যুবক-যুবতীরা টাকা ফেরতের দাবীতে ও প্রতারক হারুন অর রশিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালত এবংমির্জাপুর থানায় কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন।
আজ রবিবার পুলিশ সুত্র জানায়, হারুন অর রশিদ এনএসআইয়ের কোন কর্মরতা নন। তিনি কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কখনো শিক্ষা অধিদপ্তর,মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, সচিবালয়সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের গুরুত্বপুর্ন দপ্তরের নাম ব্যবহার করতেন। পুলিশের হাতে আটকের পর মো. হারুন অর রশিদ জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পর এনএসআইয়ে তার চাকুরী না হলেও ভুয়া নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন হারুন। এরপর থেকেই এনএসআইসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরী দেওয়ার নামে এলাকার তরুন-তরুনীদের প্রতারনার ফাঁদ পাতেন। মির্জাপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যুবক-যুবতীদের চাকরী দেওয়ার প্রলোভনে ৩-১২ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন হারুন। এভাবে অন্ততপক্ষে ২৫-৩০ জন যুবক-যুবতীর নিকট থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। তার প্রতারনার শিকার জাকুর্মী গ্রামের মাহফুজ হোসেন (২৪) এর ১২ লাখ টাকা, বাওয়ারকুমারজানি মহিলা কলেজ সংলগ্ন লুবনা আক্তার (২৩) এর নিকট থেকে ১২ লাখ টাকা এবং যুুগিরকোপা গ্রামের জাকির হোসেন (২৫) এর নিকট থেকে ৮ লাখ টাকাসহ অনেকের নিকট থেকেই টাক াহাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রতারক হারুন কাউকে চাকুরী দেয়নি এবং টাকাও ফেরত দেননি।
গত সোমবার চাকরী দেওয়ার নামে হারুন অর রশিদ তার বন্ধুর বাড়ি লাউহাটি গ্রামে যান। এলাকার লোকজন ভুক্তভোগিদের খবর দিলে তারা ঐ বাড়িতে হাজির হয়ে প্রতারক হারুনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পাশ^বর্তী মির্জাপুর উপজেলার দেওড়া গ্রামে নিয়ে এসে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এ সময় স্থানীয় লোকজন হারুনের পরিবারকে খবর দিলেও তারা তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেনি। পরে এলাকার লোকজন জাতীয় জরুরী সেবা সংস্থা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হারুনকে উদ্ধার করে মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগি লুবনা আক্তার বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামরা দায়ের করেছেন। এর আগে প্রতারনার শিকার আরও দুই যুবক টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন হারুনকে আসামী করে। ভুক্তভোগি লুবনা আক্তার বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করার পর পুলিশ তাকে জেল হাজতে পাঠান। আজ রবিবার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দুই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, আটককৃত হারুন অর রশিদ এনএসআইয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এলাকার নিরীহ তরুন-তরুনীদের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরী দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগিদের মধ্যে ইতিমধ্যে দুইজন টাঙ্গাইল কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মির্জাপুর থানায় মামলা করেছেন প্রতারনার শিকার ভুক্তভোগি লুবনা আক্তার। পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে টাঙ্গাইল কোর্টে নেওয়া হয়েছিল। জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।