মির্জাপুরে ফতেপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন এলাকায় এমপির পরিদর্শন

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই-লৌহজং নদীতে তীব্র ভাঙ্গনে নিরাপত্তাহীনতায় কয়েক শতাধিক পরিবার বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা, হাট বাজার, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফতেপুর পালপাড়া এলাকার শতাধিধ পরিবার খেলা আকামের নিচে বসবাস করছেন। ভাঙ্গন কবরিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখতে আজ শুক্রবার (২৪ জুন) পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগন বংশাই- লৌহজং নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এমপি ও কর্মকর্তাগন বংশাই নদীর ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, থলপাড়া, বানকাটা, সুতানরী, হিলড়া আদাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় এমপি ছাড়াও ইউনিয়ন আওযামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ, এমপির একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী মীর আসিফ অনিকসহ টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে জনগনের জানমালের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীর তীরে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য পানি উন্নয়নের বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে এমপি খান আহেমদ শুভ জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেন, পানি বৃদ্ধির ফলে বংশাই নদীর ফতেপুর, থলপাড়া, হিলড়া আদাবাড়ি, পারদিঘী, চাকলেশ^র, বৈলানপুর, গোড়াইল, গাড়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, হাট জাহার ও রাস্তাঘাট ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ফতেপুর ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক পরিবার। নদী ভাঙ্গনে ফতেপুর বাজার সংলগ্ন পাকা রাস্তা বিলিন হয়ে মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে বাসাইল উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন হয়ে গেছে। এ বছর হঠাৎ করে হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ. হাট ফতেপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, মির্জাপুর-বাসাইল রাস্তা, ফতেপুর-মহেড়া-মির্জাপুর রাস্তাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট ফতেপুর হাট ও বাজার এখন হুমকির মুখে। এছাড়া ফতেপুর পালপাড়া এলাকার শতাদিখ পরিবার নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকামের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য নদী ভাঙ্গন থেকে থেকে ফতেপুর ইউনিয়নকে রক্ষার জন্য শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি ইতিপুর্বে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসুচী পালন করেছে। তারপরও স্থায়ী বাঁধ নির্মান হয়নি। বংশাই নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ^রসহ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়েছে।
অপর দিকে একই অবস্থা দেখা দিয়েছে লৌহজং নদীতে। ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাহারুল ইসলাম আজাহার ও জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এ মতিনসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, লৌহজং নদীর মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি, ইচাইল, সারুটিয়া, পুষ্টকামুরী, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে বহু পরিবার দিশেহারা হয়ে পরেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, হাট বাজারসহ ফসলি জমি। ৭-৮ টি পাকা ব্রিজ হুমকির মুখে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হলে প্রতি বংশাই-লৌহজং নদীর আশপাশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ্যদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মাননীয় এমপি মহোদয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন জানিয়েছেন মির্জাপুরে বেশ কয়েকটি এলাকায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য ইতিপুর্বে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। বেশী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here