মির্জাপুরে রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ মিটিং ক্লাস বর্জন. সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাসানকে পরিকল্পিত ভাবে অবরুদ্ধ এবং পদত্যাগের জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া কে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান শিক্ষককে পুর্নবহালের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ, ক্লাস বর্জন এবং অভিযুক্ত অফিস সহকারী আবুল কালামের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভৈধ পদত্যাগপত্র বাতিল, সভাপতি ও আবুর কালামকে অপসারন এবং শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাদরে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী এবং মির্জাপুর থানা পুলিশ টহল জোরদার করেছেন। এর আগে গত বুধবার শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা মিলে বিক্ষোভ করে বিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। প্রধান শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিয়ে পদত্যাগের জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। খবর পেয়ে কোটা সংস্কার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসানকে উদ্ধার করেছে। পরিবার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি ইউএনও, শিক্ষা অফিসার ও মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসানসহ শতাদিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, রাজাবাড়ি কলেজ এবং রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়কে সভাপতি মিয়াজ উদ্দিন পরিবারতন্ত্র বানিয়েছেন। সরকারি বিধি লঙ্গন করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের পরিবারের লোকজনকে কমিটি এবং শিক্ষক ও অফিসে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে তার পছন্দের জুনিয়র শিক্ষক এহসান আহমেদ বাতেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন। স্কুল-কলেজের পাশেই গড়ে তুলেছেন কিন্ডার গার্টেন। শিক্ষার নামে এখানেও হচ্ছে বাণিজ্য। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি শিক্ষকদের নানা ভাবে হয়রানী করেন বলে শিক্ষক-কর্মচারীগন অভিযোগ করেন। সম্প্রতিরাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ এবং বিদ্যালয়ের জমি জাল দলিল করে সভাপতি নিজের নামে নেন মিয়াজ উদ্দিন। গতকাল বুধবার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিয়াজ উদ্দিন, বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আবুল কালাম, পারভেজ, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুর রহমান ও মোনায়েম খান মনুসহ তাদের পক্ষের লোকজন বিদ্যালয়ে জোর পুর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের লাঞ্চিত করে ও শিক্ষার্থীদের ভয়ভিতি দেখিয়ে শ্রেনীকক্ষ থেকে বের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর চালায়। শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে একটি কক্ষে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় শিক্ষক জমির উদ্দিনের মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। সভাপতি মিয়াজ উদ্দিন, অফিস সহকারী আবুর কালামসহ তাদরে সহযোগিরা বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হাতে লাঠিসোঠা ও ধারালো দেশীয় অস্্র নিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পদত্যাগের জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা অফিসার, সেনা ক্যাম্প, পুলিশ ও উপজেলা কোটা সংস্কার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের জানান। খবর পেয়ে কোটা সংস্কার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের আহবায়ক রুবায়েত হাসান ও নেতৃবৃন্দ বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা সদরে নিয়ে আসেন। জীবনের নিরাপত্তা, ন্যায় বিচার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা অফিসার, সেনা ক্যাম্প এবং মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষককে পুনবহাল ও সভাপতি মিয়াজ উদ্দিনকে বহিষ্কারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। বিক্ষোভ করে সমাবেশ করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে। এ সময় অভিযুক্ত অফিস সহকারী আবুর কালামের উপর হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক।সাকারী বাহিনীর সদস্যগন বিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মিয়াজ উদ্দিন এবং অফিস সহায়ক আবুল কালাম বলেন, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী, এলাকাবাসি ও শিক্ষকদের বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধকে কেন্দ্র করে এই এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রধান শিক্ষকের কারনে বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন অভিযোগ তারা অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মো. সালাউদ্দিন আহমেদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাকে নিরাপত্তাসহ তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনাস্তল পরিদর্শন করেছেন।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here