নিজস্ক প্রতিবেদক
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া ইউনিয়নের গবড়া গ্রামবাংলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষ ও সভাপতিসহ একই পরিবারের ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুত্তভোগি ও হয়রানীর শিকার কলেজের একজন ছাত্র ও মির্জাপুর উপজেলা শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন সম্ময়ক বাদী হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শরীফা হক বরাবর কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরহাদ আলীর বিরুদ্ধে কলেজকে পরিবারতন্ত্র, ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিসহ নিয়োগ বাণিজ্যের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অবৈধ নিয়োগ বন্ধের দাবীতে আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্ময়ক, কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। আন্দোলনের কারনে আজ শুক্রবার নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহর্তে এসে প্রশাসন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এই ঘটনার কারনে অধ্যক্ষ এখন এলাকা থেকে লাপাত্তা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আজ শুক্রবার গবড়া গ্রামবাংলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজে ক্যাম্পাস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতি, স্বজনপ্রতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও পরিবারতন্ত্রের কারনে আন্দোলন সংগ্রামে উত্তপ্ত কলেজ ক্যাম্পাস। অনুসন্ধানে জানা গেছে ২০০৪ সালে গ্রামবাংলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজটি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ভুয়া কাগজপত্র ও ছাত্র-ছাত্রী দেখিয়ে ভাগিয়ে নেন এমপিও। কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরহাদ আলী আওয়ামীলীগের রাজনীতিরি সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তিনি কলেজটিকে পরিবারতন্ত্র বাণিয়ে নিজের ইচ্ছেমত তার পরিবারের সভাপতি, চেয়ারম্যানসহ ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, প্রভাষক মো. সাইদুর রহমান ও প্রদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষের ছোট ভাই, প্রভাষক ইসমত আরা বেগম অধ্যক্ষের ছোট বোন, প্রভাষক সামছুজ্জামান অধ্যক্ষের বোন জামাই, ল্যাব সহকারী সাবিনা ইয়াসমিন অথ্যক্ষ মো. আরহাদ আলীর স্ত্রী, ল্যাব সহকারী খাদিজা বেগম অধ্যক্ষের ভাই প্রভাষক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী, ল্যাব সহকারী রহিমা বেগম অধ্যক্ষের ভাই প্রভাষক সাইদুর রহমানের স্ত্রী, অফিস সহকারী রিজুয়ান অধ্যক্ষের বড় বোনের ছেলে, সহকারী অধ্যক্ষ সামছুজ্জামান অথ্যক্ষের বোন জামাই, আয়া (পুরুষ) সুমন আরফিন অধ্যক্ষের বড় ভাইয়ের ছেলে, আয়া (মহিলা) ফরিদা আক্তার অধ্যক্ষের বড় ভাইয়ের মেয়ে, লাইব্রেরীয়ান আফরোজা বেগম অধ্যক্ষের শ্যালকের স্ত্রী, বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি মো. মন্টু মিয়া অধ্যক্ষের বড় বোন জামাই এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফরহাদ মিয়া কলেজের চেয়ারম্যান হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন তিনিও অধ্যক্ষের বড় ভাই। একই পরিবারের ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও সভাপতিসহ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করায় এলাকায় তোলপার শুরু হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ দুইজন কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে ঘটনা ফাঁস হলে কলেজে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। অধ্যক্ষের মেয়ে ও ভাতিজাকে নিয়োগ দিবে বলে ৭ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। আজ শুক্রবার ছিল কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়োগ পরীক্ষা। নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্ময়ক ইমন সিদ্দিকী, সহ সমন্ময়ক জুনায়েত ইসলাম নিঝুম, আজমান আহমেদ এবং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শৈশব আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের জেরা প্রশাসক শরীফ হক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
আজ শুক্রবার সকালে, এলাকাবাসি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তিনজন সমনময়কসহ কয়েক শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী করেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এতে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মির্জাপুর উপজেরা শাখার প্রধান সমন্ময়ক ইমন সিদ্দিকী, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নাজমুল হোসেন, সাধারন সম্পাদক মো. শহিদ মিয়া প্রমুখ। আন্দোলনের ফলে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে গবড়া গ্রামবাংলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অভিযুক্ত মো. আরহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এলাকার কিছু দুষ্টু লোক কলেজের সুনাম খুন্ন করারর জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কথা তিনি অস্বীকার করে বলেন সরকারী নিয়ম মেনেই বিভিন্ন পদে শিক্ষক-কর্মচারী, সভাপতি এবং চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশক্রমে দুইজন কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ (স্থগিত) করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গবড়া গ্রামবাংলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরহাদ আলীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে