মির্জাপুরে কলেজ ছাত্রী তানিয়ার আতœহত্যার প্ররোচনাকারী সুজন পাঁচ দিনেও গ্রেফতার হয়নি

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
ধর্ষনের নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ায় অপমান সইতে না পেরে লোকলজ্জায় সুইসাইড নোট লিখে কলেজ ছাত্রী আতœহত্যার ঘটনা মামলা হলেও পাঁচ দিনেও মুলহোতা বখাটে সুজন গ্রেফতার হয়নি। মেয়েকে হারিয়ে তানিয়ার পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে। ন্যায় বিচার নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন তানিয়ার অসহায় পিতা হারুন অর রশিদ। তানিয়ার আতœহত্যার ঘটনা এবং মুল আসামী পাঁচ দিনেও গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। থানা পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন মামলার পর থেকেই আসামী সুজনকে গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
আজ রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কলেজ ছাত্রী তানিয়ার হারুন অর রশিদ জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার আট নং ভাতগ্রাম ইউনিয়নের সিংজুরি গ্রামে। এক পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে তানিয়া বড়। অভাবের সংসারে বড় ছেলে আবু তালেবকে হবিগঞ্জ কলেক থেকে ডিপ্লোমা পাশ করিয়েছে। মেয়ে তানিয়া মির্জাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এক মেয়ে ৯ম ¤্রণেীতে এবং ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পরে। অভার অনটনের মধ্যে হারুন অর রশিদ সন্তানদের লেখাপড়া করার বেষ্টা চালিয়ে আসলেও মেয়ে আতœহত্যার ঘটনায় সব তছনছ হয়ে গেছে বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। বখাটে ও ঘটনার মুরহোতা সুজনের পিতার নাম আব্দুর রশিদ মিয়া, গ্রামের বাড়ি একই ইউনিয়নের বুড়িহাটি গ্রামে। কলেজে আসা যাওয়ার পথে বখাটে সুজন তানিয়াকে দীর্ঘ দিন ধরে উত্যক্ত করে আসছিল। নানা কৌশলে তানিয়াকে তুলে নিয়ে ধর্ষন এবং ব্লাক মেইল করে ধর্ষনের নগ্ন ভিডিও ধারন করে সুজন। তানিয়া লোক লজ্জায় বিষয়টি পরিবারকে জানাতে পারেনি।
এদিকে ধর্ষনের নগ্ন ও আপত্তিকর ভিডিও ধারন করে বখাটে সুজন ফেইজবুকে ছড়িয়ে দিবে এই হুমকি, ভয় ভিতি দেখিয়ে ব্লাক মেইল করে তানিয়ার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। গত দুই সপ্তাহ পুর্বে সুজন তার মোবাইলের লোকাল সাফি নামে একটি ফেইজবুক আইডি থেকে তানিয়ার ধর্ষনের নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে তানিয়া মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। এক পর্যায়ে গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তানিয়া পরিবারের অজান্তে লোকলজ্জায় সুইসাইড চিটি লিখে গত বুধবার নিজ বাড়িতে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তানিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার এবং সাইসাইট নোট উদ্ধার করে। বখাটে সুজনের কারনে আমার পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। আমি বখাটে সুজনকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসি চাই।

আতœহত্যার আগে তানিয়া সুইসাইড নোটে যা লিখে গেছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো—–আমারে তুমরা সবাই মাফ কইরা দিও, আমার জন্য তুমাগো অনেক মান-সম্মান নষ্ট হইছে, আমি চাই না তুমাগো আরো মান-সম্মান নষ্ট হোক। তোমরা জানো না ঐতি কি কি করছে আমার সাথে। আমারে জোর কইরা ব্লাকমেইল কইরা আমার সাথে ধর্ষন করছে। তারপর আমার ছবি তুইলা সেই ছবি দিয়া আমার ব্লাকমেইল করেছে। আমার কাছ থাইকা দেড় লাখ টাকার জিনিস নিছে।
ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাহারুল ইসলাম আজাহার ও তানিয়ার ভাই আবু তালেব বলেন, সুজনের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে। সুজন শুধ তানিয়াকেই নয় এলাকার আরও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। তার বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগের অন্তনেই। সর্বশেষ ব্লাক মেইল করে কলেজ ছাত্রী তানিয়াকে মৃত্যুর কুলে ঠেলে দিয়েছে। তানিয়ার কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদসহ তানিয়ার সহপাঠী, শিক্ষক-কর্মচারী এবং এলাকাবাসি সুজনকে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং ফাঁসির দাবী জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবু সাইদ বলেন, তানিয়ার আতœহত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে সুজনকে প্রধান আসামী করে মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকেই বখাটে সুজন পলাতক। বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনিীল কয়েকতটি টিম মাঠে কাজ করচেন। অচিরেই সে গ্রেফতার হবে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, কলেজ ছাত্রী তানিয়ার আতœহত্যার মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ঘটনার মুলহোতা সুজনকে গ্রেফতারে একাধিক টিম মাঠে রয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here