মির্জাপুরে পুলিশ হেফাজতে আসামীর ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা, প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ অগ্নিসংযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে হাজত খানার ভিতরে লেবু সিকদার (৫০) নামে এক আসামী গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করেছে। আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। তার পিতার নাম বাহার উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি বাঁশতৈল গ্রামে। লেবু সিকদারের স্বজনদের অভিযোগ পুলিশ হেফাজতে তাকে নির্যাতনের পর হত্যাটি আতœহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে হাজত খানার ভিতরে আসামী আতœহত্যার ঘটনার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসি গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক রাস্তা অবরোধ এবং অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবাদ সামবেশ করেছে। দায়িত্বে অবহেলায় সুব্রত সরকার নামে এক পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গঠন হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি। মির্জাপুর থানার ওসি তদন্ত মো. গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুল ঘটনা ও ফাঁড়ি পুলিশের দাবী ঃ-
বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাকাওয়াত হোসেন জানান, গতকাল সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মির্জাপুর উপজেলার ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া গ্রামে সখিনা বেগমের নিজ ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সখিনা বেগমের সাবেক স্বামীর নাম মফিজ উদ্দিন। ৫-৬ বছর পুর্বে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া গ্রামে বাড়ি নির্মান করে এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সখিনা বেগম বসবাস করতেন। এক ছেলে মালেশিয়া প্রবাসি। তার দুই মেয়ে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ছেলের বৌ নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। গত দুই তিন দিন পুর্বে ছেলের বৌ তার বাবার বাড়ি যান। এই সুযোগে গতকাল রবিবার রাতে দুষ্কৃতকারীরা তার ঘরে ঢুকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত সখিনা বেগমের সন্ধান না পেয়ে আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হয়। পুলিশকে খবর দিলে বাড়িতে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। সখিনার ভাই বাদশা সিকদার বাদী হয়ে সাবেক স্বামী মফিজ উদ্দিন এবং লেবু সিকদারকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৫, তাং-২৬/৯/২২/ ধারা ৩০২/৩৪ প্যানাল কোড। পরিবারের দাবী লেবু সিকদার সখিনা বেগমরে প্রেমিক। তার বাড়িতে যাতায়াত করতো। তাদের ধারনা লেবু সিকদার ও মফিজ তাকে হত্যা করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মফিজ ও লেবুকে আটক করে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। ভোর পাঁচটার দিকে পুলিশ ফাঁড়ি হাজতের ভিতরে টয়লেটে লেবু মিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে। তাকে নির্যাতন করা হয়নি। পুলিশ ফাঁড়ির বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিযোগ অস্বীকার করেন।
লেবু সিকদারের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যঃ
লেবু সিকদারের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪৬) অভিযোগ করে, তার স্বামীর কোন দোষ ছিল না। বাঁশতৈল ফাঁড়ির দারোগা সাকাওয়াত হোসেন ও নেছার উদ্দিনসহ ৬-৭ পুলিশ আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। তারা রাতভর তাকে নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে থানার ভিতরেই সে মারা যায়। পুলিশ নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য ঘটনাটি আতœহত্যা বলে দাবী করছে। পুলিশ তার স্বামীর হত্যার ঘটনাটি কাউকে জানায়নি। একই অভিযোগে করেছে লেবু সিকদারের দুই মেয়ে রচনা আক্তার, কলেজ পড়–য়া ছাত্রী শিলী, এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে মৃদুল সিকদার এবং লেবুর ভাই বজলুর রশিদ। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
দোষীদের শাস্তির দাবীতে রাস্তা অবরোধ অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদ সমাবেশঃ-
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবীতে দুপুর আড়াইটার দিকে বিক্ষব্দ এলাকাবাসি গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা রোড অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। তিন ঘন্টা ব্যাপি রাস্তা অবরোধ থাকলে বিপাকে পরেন যাত্রী ও সাধারন লোকজন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ পুলিম বাহিনী এবং মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ৭২ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির আশ^াস দেওয়া হলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয। এ সময় বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হেলাল দেওয়ান, আওয়ামীলীগ নেতা মো. লাল মিয়া, ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত একান্ত সহকারী মীর আসিফ অনিক, এসিল্যান্ড ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
যত অভিযোগ বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে ঃ-
আজ মঙ্গলবার বাঁশতৈল ইউনিয়নের অন্তত ১২ জন ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের যোগ সাজসে এলাকায় জুয়া, মাদক ব্যবসা, টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি দখল করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানীসহ অনিয়ম দুর্নীতির পাহাড় রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এ অবস্থা। তারা অভিযোগ করেছে পরিদর্শক মো. সাকাওয়াত হোসেন, পুলিশ অফিসার নেছার উদ্দিন, সুরুজ্জামান, খলিলুর রহমান, সেলিম রেজা ও খালেকুজ্জামানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ। একের পর এক ঘটছে বাঁশতৈ পুলিশ ফাঁড়িতে ঘটনা। এলাকাবাসি দুর্নীবিজা পুলিশ সদস্যদের দ্রুত প্রত্যাহার ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন ও পুলিশ সুপারের বক্তব্যঃ-
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে আসামী আতœহত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলায় সুব্রত সরকার নামে এক পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ, লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেনকে সভাপতি এবং সখীপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রকিবুর রাজা এবং ইন্সফেক্টর (ক্রাইম) সুব্রত সাহাকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কোন পুলিশ সদস্য দোষী প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মির্জাপুর থানা পুলিশের বক্তব্যঃ-
অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম এবং ওসি তদন্ত মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, সখিনা বেগমের পরিবার হত্যা মামলা করলে লেবু সিকদার ও মফিজকে জিহ্ঝাসাবাদের জন্য বাঁশতৈল পুলিশ ফ৭াড়িতে আনা হয়। থানার ভিতরে টয়লেটে ফাঁস দিয়ে লেবু সিকদার আতœহত্যা করেছে। কেউ দোষী প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট তন্ত কমটি গঠন এবং এক কন্সটেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারর কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতেই লাশ দাফন করা হয়েছে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here