মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল,
টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট কেনাবেচা নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ভরাডুবিকে কেন্দ্র করে মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. সিরাজ মিয়া তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে বলে মীর এনায়েত হোসেন মন্টু অভিযোগ করেন। প্রবীন এই নেতার লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পাহাড়ায় আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী সভায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. সিরাজকে মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাতে উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে সিরাজকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আজ শনিবার (৫ নভেম্বর) উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার মো. তাহরীম হোসেন সীমান্ত এবং দপ্তর সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম জহির নিশ্চিত করেছেন। তারা আরও জানিয়েছেন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এ পর্যন্ত আরও ১২ আওয়ামীলীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছে। সিরাজকে বহিষ্কার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ১৭ অক্টোবর ছিল টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের নির্বাচন। মির্জাপুর নির্বাচনী এলাকায়-১০ এর জন্য সদস্য প্রার্থী ছিলেন পাঁচ জন। এদের মধ্যে মো. তাহেরুল ইসলাম তাহের এবং মো. সিরাজ মিয়া ছিলেন আওয়ামীলীগের সমর্থক। মো. সিরাজ মিয়া অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু ক্ষমতার দাফট দেখিয়ে পৌরসভা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের নানা ভাবে ভয়ভিতি দেখিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার বিনিময়ে ভোট কেনাবেচা করে আমাকে পরাজিত করে তার পছন্দের প্রার্থী মো. তাহেরুল ইসলাম তাহেরকে বিজয়ী করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থীর প্রতি বিশ^াস ঘাতকতা করেছেন। আগামী ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে গত ২৮ অক্টোবর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্্র ভবনের মিলনায়তনে বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামীলীগ। ঐ বর্ধিত সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু উপস্থিত হলে পরাজিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. সিরাজ মিয়া তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। পাঁচ বাবের ইউপি চেয়ারম্যান, তিন বারের উপজেলা পরিষদের পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কান্ডারী প্রবীন নেতা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে লাঞ্চিত করার ঘটনা নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। হামলাকারী আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজকে দল থেকে বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী উঠে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করিনি এবং ভোট কেনাবেচার সঙ্গেও জড়িত ছিলাম না। সিরাজ জেলা পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করলেও তার এলাকায় কোন জনপ্রিয়তা নেই। সে প্রতারক ও বাটপার হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ভোটারগন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। সিরাজ আওয়ামীলীগের নেতা হলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দুই জন এমপির উপস্থিতিতে শারীরিক ভাবে আমাকে লাঞ্চিত করে হুমকি দিয়েছে। যা মেনে নেওয়া যায় না। আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সভায় সদস্যদের সিদ্ধান্তে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিস্কৃত আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. সিরাজ মিয়া বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার বাকবিতন্তা হয়েছে। আমি তাকে শারীরিকি ভাবে কোন প্রকার লাঞ্চিত করিনি। আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে অন্যায় ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি আমি জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, আওয়ামীলীগ একটি বৃহৎ সংগঠন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের দল। সেই দলের নেতা হয়ে সিরাজ মিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর মত একজন ত্যাগি ও প্রবীন নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেছে। এর আগে সে আমাকে অপমান ও অপদস্ত করেছে। সে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। গতকাল শুক্রবার আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিরাজকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সকল পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপজেলায় আওয়ামীলীগের ১২ নেতা বহিষ্কার–ঃ
অপর দিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আরও ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন মহেড়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া, আনাইতারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ইঞ্চিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম, আবু হেনা মুস্তফা কামাল ময়নাল হক, ওয়ার্শি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আব্দুল্লাহে বাকী, বহুরিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতা রেজাউল করিম বাবুল, আজগানা ইউনিয়নের সাবকে চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম রফিক সিকদার, বাঁশতৈল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. শামসুল আলম, আওয়ামীলীগ নেতা মো. লাল মিয়া ও হেলাল দেওয়ান, তরফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ ও ইজ্জত আলী জনি এবং ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. হুমায়ুন তালুকদার।