মির্জাপুরে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ফাউন্ডেশন ডেতে আরপি সাহাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লি. এর ৯১ তম ফাউন্ডেশন দিবস নানা এায়াজনে পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার ( ১৯ নভেম্বর)উত্থান একাদশী ও তিথি অনুযায়ী উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শহীদ দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহার) ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তীতে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে তার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী কমপ্লেক্্র, নারী জাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ভারতেশ^রী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও বিএসসি নার্সিং কলেজ এবং তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও নারানগঞ্জ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মুল অনুষ্ঠান ছিল কুমুদিনী কমপ্লেক্্েরর ভারতেশ^রী হোমসের সবুজ চত্তরে। কুমুদিনী কমপ্লেক্্র বর্নিল সাজে সজ্জিত করা হয়। সন্ধায় ভারতেশ^রী হোমসের সবুজ চত্তরে আয়োজন করা হয় দৃষ্টি নন্দন ডিস প্লে, মোমবাতি প্রজ্জলণ করে আর পি সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা এবং কুমুদিনী পরিবারের নিহতদের আবেগঘন পরিবেশে স্মরন করা হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরেন কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা। অনুষ্ঠানে ভারত, নেপাল, ভুটান, অস্টেলিয়াসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ভিসি, বিচারপতি, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ কয়েক শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের পদচারনায় অনুষ্ঠান স্থল ও কুমুদিনী কমপ্লেক্্ের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়।
অনুষ্ঠান শেষে ভারতেশ^রী হোমসের সবুজ চত্তরে হোমসের ছাত্রী ও অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্জলন অনুষ্ঠানে ছাত্রীরা গাইতে থাকে ও আলোর পথ যাত্রী, এ যে রাত্রি এখানে থেমোনা, আগুনের পরশ মনি ছোয়াও প্রাণে এ জীবন পুর্ন কর এবং আনন্দ লোকে মঙ্গোলো আলোকে বিরাজ— এ সময় অতিেিদর মধ্যে এক ্আবেগঘণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় আরপি সাহার ১২৬ তম জন্মজয়ন্তী এবং কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ফাউডেশন ডে উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালে মির্জাপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্র পোদ্দার এবং মায়ের নাম কুমুদিনী দেবী। দরিদ্র পরিবারের জন্মের পর অভাব আর দারিদ্রের মাঝে বড় হয়ে তিনি দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। যুদ্ধের সময় ভারতের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তিনি ভারতে চলে যান। তার সাহস আর সততার জন্য ঐ ব্যবসায়ী রনদা প্রসাদ সাহাকে তার সম্পত্তির দেখা শোনার দায়িত্ব দেন। এভাবেই তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হন।
এ দিকে প্রচুর অর্থের মালিক হলেও তিনি সে টাকা নিজের কাজে ব্যয় করেননি। তার সমুদয় সহায় সম্পদ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দান করে যান। তিনি সেবার ব্রত নিয়ে দেশ দেশের কল্যাণের জন্য নিজেকে আত্ব নিয়োগ করেন। তিনি মির্জাপুর ও দেশের জনসাধারনের সেবার জন্য গড়ে তুলেন কুমুদিনী হাসপাতাল, নারী শিক্ষার জন্য ভারতেশ^রী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা বিশ^বিদ্যালয়, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ, নারায়নগঞ্জে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্রে কলেজ, টাঙ্গাইল কুমুদিনী মহিলা কলেজ, মির্জাপুর মহাবিদ্যালয় বর্তমানে মির্জাপুর সরকারী কলেজ, মির্জাপুর এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে মির্জাপুর এস কে পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করেন। তার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করা হয় যা দেশে ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে।
১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রীয় ভাবে অংশ নিয়ে দেশ মার্তৃকার জন্য ঝাপিয়ে পরেন। যুদ্ধের সময় তার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে বহু নারী পুরুষ আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা সেবা পান। ১৯৭১ সালের ৭ মে এদেশের কিছু রাজাকার আল বদর বাহিনী ও পাকিস্তানী দোষররা মহান এই মানুষ দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। আজও তাদের কোন খোঁজ মিলেনি। কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লি. বা কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ৯০ তম প্রতিষ্ঠা দিবস ও দানবীর রনদা প্রসাদ সাহার ১২৫ তম জন্ম জয়ন্তীকে ঘিরে এ বছরও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কুমুদিনী পরিবার ও মির্জাপুর গ্রামবাসি।
এ দিকে এ বছর কুমুদিনী ওয়েল ট্রাস্ট অব বেঙ্গল বিডি লি. বা কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ৯১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দানবীরের ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে তার তীর্থ স্থান কুমুদিনী কমপ্লেক্্র, ভারতেশ^রী হোমস, নার্সিং স্কুল ও কলেজ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এবং মির্জাপুর গ্রামে নানা সাজে সজিজত করা হয়েছিল। প্রার্থনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসুচী, কাঙ্গালী ভোজ, হাসপাতালের রোগীদের মাঝে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়। ভারতেশ^রী হোমসে অনুষ্ঠিত হবে তার কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে প্রশাসনের বিভিন্ন অধিপ্তরের কর্মকর্তা, কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট্র অব বেঙ্গল (বিডি) লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, পরিচালক (শিক্ষা) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিভা মুৎসুদ্দি, পরিচালক শ্রী মতি সাহা, পরিচালক সম্পা সাহা, মহাবীর পতি, কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায়, এজিএম (অপারেশন) অনিমেশ ভৌমিক লিটন, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. এম এ হালিম, ভারতেশ^রী হোমসের প্রিন্সিপাল ত্রয়ী বড়–য়া, কুমুদিনী নার্সিং কলেজের প্রিন্সিপাল সিন্টার রীনা ক্রুস ও মেট্রন সিসন্টার দিপালী পেরেরাসহ শিক্ষক এবং কুমুদিনী পরিবারের কর্মকর্তাগন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here