মির্জাপুরে ইট ভাটার মালিকরা প্রতিকুলতার মাঝে চরম ঝুঁকিতে॥ ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে দিশেহারা

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ইট ভাটার মালিকরা নানা প্রতিকুলতার মাঝে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভরা মৌসুমেও ভাটা চালু করতে না পারায় ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে দিশেহারা। মাালিকগন এখন উদ্বেক ও উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। ক্ষতির পরিমান কয়েক শত কোটি টাকা। অপর দিকে কয়লার দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারনে শতাধিক ইট ভাটার মালিকগন পথে বসার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। বিপুল অংকের টাকা বিনিযোগ করেও কয়লার অভাবে ইট ভাটা চালু করতে পারছেন না বলে মালিকগন অভিযোগ করেছেন। উপজেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন এক দিকে কয়লার দাম টন প্রতি ১৮-১৯ হাজার টাকা বৃদ্ধিতে প্রস্তুতকৃত ইট নষ্ট হয়ে বিপুল অংকের টাকা ক্ষতির মুখে পরেছেন । এ যেন মরার উপর খরার ঘাঁ। কিছু কিছু ইট ভাটায় কাঠ বা লাকড়ির পরিবর্তে সরকারী নিয়ম মেনে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কোন ইট ভাটায় লাকড়ি বা কাঠ পোড়ানো হচ্ছে না।
আজ রবিবার (১৯ নভেম্বর) উপজেলার বাইমহাটি, সোহাগপুড়া, গোড়াই, সৈয়দপুর, হাটুভাঙ্গা, নয়াপাড়া, তরফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ইট ভাটায় কাঁচা ইট নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি সুত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে পরিবেশ বান্ধব শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় সরকারী নিয়ম মেনেই কয়লা দিয়ে ইট প্রস্তুত করা হয়। কয়লা মুলত ইন্দোনেশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড ও মলেশিয়া থেকে আমদানী করতে হয়। এ বছর কয়লা আমদানী নিয়ে নানা সমস্যা হয়েছে। ৮ হাজার টাকার কয়লা দাম বেড়ে হয়েছে ২৮-২৯ হাজার টাকা। ভাটা থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে আসছেন। গত ৩০ বছরের ব্যবধানে ব্যক্তি মালিকাধীন জমি ও ভাড়া জমি নিয়ে এসব ইটভাটা গড়ে উঠলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এসব ইটভাটা এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। মির্জাপুর উপজেলায় ইটভাটায় লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বাইমহাটি, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, ভাওড়া, ভাদগ্রাম, গোড়াই. লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সদস্য মো. আতিকুল ইসলাম সিকদার, হাজী মোক্তার আলী সিদ্দিকী, ইব্রাহীম মিয়া, আওলাদ হোসেনসহ ২০-২৫ জন মালিক জানায়, ইটভাটা একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ বছরের ব্যবধানে পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসনের ইট পোড়ানোর লাইসেন্স গ্রহন করে ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। প্রথমে টিন চিমনি, পরবর্তীতে ১২০ ফুট উচু ফিক্্রড চিমনি ও ২০১৩ এর ২(ঘ) জালানি সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন হাইব্রিড, হফম্যান, কিলন, জিগজ্যাগ, ভ্যাটিক্যাল স্যাফট ফিলনসহ সরকারী ভাবে ইট ভাটা আইন জারি হলে ১২০ ফুট চিমনি ভেঙ্গে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা স্থাপন করা হয়। এখন এসব ভাটায় কাঠ, বাঁশ ব্যবহার হচ্ছে না এবং পরিবেশেরও কোন ক্ষতি হচ্ছে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে চিমনি পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব ইটভাটা এখন পরিবেশেরও কোন ক্ষতি করছে না। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ২০১৯ এর (নিয়ন্ত্রন) (সংসেধন) শিথিল হলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় মির্জাপুরে ইটভাটা মালিকরা এখন চরম বিপাকে পরেছেন। এই শিল্পের সঙ্গে সরকার ও দেশের অনেক উন্নয়ন চিত্র জড়িত।
একাধিক ইটভাটার মালিক অভিযোগ করেন, মির্জাপুর উপজেলায় সরকারী বিধি অনুযায়ী পরিবেশ বান্ধব জিকজ্যাক ইটভাটায় উন্নত মানের ইট পোড়োনো হয়। নানা প্রতিকুলতার মাঝে একজন ইটভাটা মালিক জীবনের কষ্ঠার্জিত সমস্ত অর্থ ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে একটি ইটভাটা স্থাপন করলেও তাদের হয়নারীর শিকার হতে হচ্ছে। ২০১৩ সালের আইন বাস্তবায়ন না করে পরিবেশ অধিদপ্তর এখন তাদের ছাড়পত্র দিচ্ছে না। গত বছর কয়লার দাম ছিল প্রতি টন ৯-১১ হাজার টাকা। চলতি বছর এক টন কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮-২৯ হাজার টাকা। গত বছর এক হাজার ইটের দাম ছিল ৬-৭ হাজার টাকা। কয়লাসহ জালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ভরা মৌসুম শুরু হলেও নানা প্রতিকুলতার মাঝে ইটভাটা চালু করা যাচ্ছে না। ইট নষ্ট হয়ে চরম বিপাকে এবং কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন।
এ ব্যাপারে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির আহবায়ক মো. মঞ্জুরুল কাদের বাবুল বলেন, মির্জাপুর উপজেলায় প্রতিটি ইট ভাটায় পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিকে ইট পোড়ানো হয় এবং কোন কাঠ পোড়ানো হয় না। একটি চক্র নানা ভাবে তাদের হয়রানী করে যাচ্ছে। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, কয়লার দামসহ বিভিন্ন উপকরনের দাম বৃদ্ধির কারনে উপজেলার ইটভাটা মালিক ঋনে জর্জরিত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। দফায় দফায় জালানির দাম বৃদ্ধি ও পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দেওয়ায় ইটভাটা চালু করা যাচ্ছে না। ব্যাংক ঋনের চাপে তারা মরার উপক্রম হয়েছে। তাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে কর্মরত লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে। সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে তারা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সচিব, পরিবেশ অধিপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। ইটভাটা চালু ও ছাড়পত্রসহ লাইসেন্স প্রদানের জন্য তিনি সরকারের সেঙ্গ জোর দাবী জানিয়েছেন। ইতি মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ্য ভাটা মালিকগন উচ্চ আধালতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে রিট করেছেন। রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসন থেকে ভাটা মারিকদের হয়রানী না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের কর্মকর্তাগন বলেন, মির্জাপুর উপজেলায় বেশ কিছু ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরেরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স রয়েছে। যাদের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই তারা সরকার ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে তাদের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here