বিশেষ প্রতিনিধি
শেকড়ের টানে উৎসব মুখর পরিবেশে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের (বিএনবি উচ্চ বিদ্যালয়ের) এসএসসি-১৯৯২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়েছে। ঘর কুয়াশা আর তীব্র শীত উপেক্ষা করে পুরনো বন্ধুদের আগমনে বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ জুড়ে এক মিলন মেলায় পুরিনত হয়। দিন ব্যাপি গল্প, আড্ডা, হাসি ও কান্নায় পুরো অনুষ্ঠানস্থল দিন ব্যাপি এক অন্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ৩১ বছর পর একে অন্যকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে ফেলে আসা দিনগুলোর নানা স্মৃতি তুলে ধরে। তাদের আনন্দ, আবেগ ও উল্লাসে মনে করিয়ে দেয় তার যেন ফিরে গেছেন পুরোনো দিনের শৈশব জীবনে। এমন আবেগ, উল্লাসে বুঝিয়ে দিল দূরে থাকলেও হয় না কখনো বন্ধুদের বাঁধন আলগা প্রাণে প্রাণে থাকে আন্তরিক ভালবাসার স্পন্দন। আনন্দ ভাগাগি করে নিতে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দিয়েছিলেন খান আহমেদ শুভ এমপি, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসেন সিদ্দিকী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জুলহাস উদ্দিন, সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষকবৃন্দ, বাংলাদেশ জাতীয় পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি খন্দকার বিপ্লব মাহমুদ উজ্জলসহ গনমাধ্যমকর্মী এবং গুনীজন।
গুনীজন। গতকাল শনিবার (৭ জানুয়ারি) বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়।
বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের এস. এস,সি-১৯৯২ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সভাপতি এডভোকেট মো.মুজিবুর রহমান ও উক্ত স্কুলে সদ্য যোগদানকৃত সহকারি প্রধান শিক্ষক মীর আনোয়ার হোসেন টুটুলের সঞ্চালনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত উত্তোলন, প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্মরনে এক মিনিট নিরবতা পালন, দোয়া মাহফিল, ৯২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফুল, টি-শার্ট, ক্রেস্ট ও নানা উপটোকন দিয়ে বরণ, শিক্ষকদের উপহার সামগ্রী বিতরণ, স্মৃতি চারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র ও পুরষ্কার বিতরনের মধ্য দিয়ে রাত পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান।
ঘন কুয়াশা কনকনে হাড় কাপানো শীতকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে আসতে শুরু করে বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ১৯৯২ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা। উপস্থিত হন প্রাক্তন অনেক শিক্ষক। আনন্দে উল্লাসে মাতিয়ে তুলেন স্কুলের মাঠ প্রাঙ্গন ও ক্যাম্পাস। তারা যেন ফিরে এসেছে তাদের ৩১ বছরের শৈশব জীবনে।কমতি হয়নি তাদের বন্ধুত্বের বন্ধন। স্কুলের শিক্ষক ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাতীদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ও ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন যারা এবং বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের মরহুম শিক্ষক ও ১৯৯২ ব্যাচের মরহুম শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সাবেক শিক্ষার্থী ডা. শাহিনুর রহমান খান শাহীন, সহকারি অধ্যাপক স্বপ্না চৌধুরী, এডভোকেট মুজিবুর রহমান, ওসি মাহফুজুর রহমান, সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহআলম, সুনিল রায়, এড. ইঞ্জিনিয়ার নবিবুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সোহেল, মাহমুদুর রহমান পল্লব, সাজিদুল ইসলাম জীবনসহ অনেকেই বলেন, ১৯৪৮ সালে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যাপিঠ ছিল এলাকার উচ্চ শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এর সুনাম ছিল দেশ জুড়ে। দীর্ঘ দিন পর পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে আমরা আবেগ আপ্লুত। এমন আয়োজন যেন আমাদের আরও বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা যোগাল। এটি আমাদের শেকড়ের টান।এই পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান যেন আমাদের জীবনে বারবার আসে। ১৯৯২ ব্যাচের ছাত্র উক্ত স্কুলে সদ্য সহকারী প্রধান শিক্ষক মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল বলেন, আমি এই স্কুলের ১৯৯২ ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। আজ আমি এই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। আজ এই অনুষ্ঠান করতে পেরে আমি স্বার্থক। আমার কৈশর ও শৈশব বন্ধু-বান্ধবীদের পেয়ে খুবই আনন্দিত । তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক বাবু দুঃখী রাজবংশী আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার ন্যায়নীতি, সততা, আদর্শ গুনাবলী ও মধ্য দিয়ে স্কুল পরিচালনা করতে দেখেছি। তার এই আদর্শ আমি ধরে রাখতে সকলেল সার্বিক সহযোগিতা চাই।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মোবারক হোসেন সিদ্দিকী ও প্রধান শিক্ষক মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, এ আয়োজন ঘিরে যে প্রাণের স্পন্দন তৈরি হয়েছে, সেটি যেন আমাদেরকেও স্পর্শ করছে। এমন আয়োজন মির্জাপুর বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৯২ সালের এসএসসির ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। এ বন্ধন যেন ভবিষ্যতেও অটুট থাকে। স্কুলের মাঠের পশ্চিম দিকে টানানো হয়েছিল শামিয়ানা ও বিশাল মঞ্চ। আলোকসজ্জায় সেজেছিল পুরো উৎসবস্থল।
খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, ঐহিত্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাটী নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯২ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এমন একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আমাকে সত্যিই বিমোহিত করেছে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছেও এটি শিক্ষনীয় এবং মাইল ফলক হয়ে থাকবে। বিদ্যালয়কে সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি সকল ধরনের আশ^াস দিয়েছেন।