মোঃ সাজজাত হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই ও লৌহজং নদীর অন্তত ১০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে নদী পারের রাস্তা, ঘরবাড়ি ও ব্রীজ । সামনের বর্ষা মৌসুমে বংশাই নদীর পাড় রক্ষায় জনকল্যাণে নেওয়া সরকারের জিও ব্যাগ প্রকল্পও ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।
অভিযোগ উঠেছে, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান আকন্দর ছত্রছায়ায় দিনের পর দিন বংশাই নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। তারা মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে এই বালুর ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। কিন্তু এতে অনেকটাই নির্বিকার প্রশাসন। নামমাত্র অভিযান চালিয়ে কিছু শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করা হলেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বংশাই ব্রীজের উত্তর পাশের্^, উয়ার্র্শী ইউনিয়নের আরহা এলাকায় দিনে এবং রাতে একদিকে এসকেভেটর মেশিনে বালু কাটা ও উত্তোলন করে নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে। নদীর পাড় যেন বালুর পাহাড়। অন্যদিকে শতাধিক নানা রকম যানবাহনে বিপণন করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বরাবরই বালু উত্তোলনের মহোৎসবের এই ঘটনাটি রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন দেখেও যেন দেখছে না বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেগে ওঠা চর বা জমি ব্যক্তিমালিকানা হলেও, প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট নদীগর্ভে চলে যাওয়া এসব জমির মালিকদের কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো হুমকি-ধমকি দিয়ে জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করছে। জমির মালিকরা এ নিয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেও কোনো সুফল পাননি।
জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে প্রতিবছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সে সময় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের কোটি কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পরতে হয়।
স্থানীয়ভাবে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র ও বালু কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা জানান, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান আকন্দ উপজেলার অধিকাংশ বালু কাটা, উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। কিন্তু সে ও তার লোকজনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এমনকি প্রশাসনকে এ নিয়ে নানাভাবে জানিয়েও অজ্ঞাত কারণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না।
এমন অভিযোগ রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল কাদের ও আজগানা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মোক্তার আলীর বিরুদ্ধেও। তিনিও এই বালু কাটা ও বালু বিক্রির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। তারাও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে ও প্রভাব বিস্তার করে এই বালু সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য মিলেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান আকন্দ বালু উত্তোলনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা রটাচ্ছে।
উপজেলার অধিকাংশ বালু কাটা ও উত্তোলন পয়েন্ট থেকে তিনি সিংহ ভাগ কমিশনে ব্যবসা করেন এমন অভিযোগে তিনি বলেন, রাজনীতি করি। অনেক কর্মী নিয়ে চলতে হয়। তাদের অর্থনৈতিক কোনো সহায়তা করতে পারি না। কিন্তু তারা আমার কর্মী হয়ে যদি কোথাও একটু সুবিধা আমার নাম ভাঙিয়ে নেয়, তাহলে সেখানে কিছু করার থাকে না। কিছু বিষয় ছাড় দিয়েই আমাদের রাজনীতি করতে হয় ও কর্মী ধরে রাখতে হয়।
দলের নাম ভাঙিয়ে বালু কাটা ও উত্তোলন বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ ও সধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার তাহরীম হোসেন বলেন, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। যারা এই বেআইনি কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.হাফিজুর রহমান বলেন, বালুদস্যুদের দমনে প্রশাসনের পদক্ষেপের কোনো কমতি নেই। অভিযান চলছে এবং চলবে। মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানাসহ আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারি নেই এ কথাটি সঠিক নয়।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বালু তুলেছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।