মোঃ সাজজাত হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। বরং ইটের মৌসুম আসাতে ভাটাগুলোতে কাজ চলছে জোরেশোরে। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যাচ্ছে না প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে।
জানায় গেছে, টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ভাটার কার্যক্রম। অবৈধ এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কয়লার দাম বাড়তি থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদারে লাকড়ি-কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বৃক্ষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করা যায় না। মির্জাপুর উপজেলায় মোট ১০১টি ইটভাটা রয়েছে এর মধ্যে ৬০ ইটভাটার একটির ও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। অপর দিকে এসব ইটভাটাতে ৩ থেকে ৪ ধরনের ফরমা ব্যবহার করা হয়। এতে ইটের সাইজ ছোট-বড় করে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়ে থাকে।
শনিবার সকালে উপজেলার গোড়াই, জামুর্কী ও আজগানা ইউপিতে অবস্থিত হাজী ব্রিকস , এস বি এম ব্রিকস ও ভাই ভাই ব্রিকস ইট ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ধারেই কয়লা ও কাঠ জমা করে রাখা আছে। ভাটাতে কাঠ পোড়ানোর ফলে চিমনি দিয়ে প্রচ- বেগে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর সেই ধোঁয়া স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বসতি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো.মঞ্জুরুল কাদের বাবুল ও আজগানা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মোক্তার আলী জানান, বিভিন্ন ভাটায় বনের কাঠ পোড়ানোর কথা স্বীকার করেন। কাঠ ব্যাবহার করলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বলেও তারা দাবি করেন। কয়লার দাম বাড়তি থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়ে থাকে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত বছর মির্জাপুর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। পরে অনেক দেনদরবার করে সে যাত্রায় আর অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। অভিযান না চালানোর জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের চাপও রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।
পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো.জমির উদ্দিন বলেন, আমাদের ম্যানেজ করে অবৈধ ভাটা পরিচালনার বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইট ভাটা গুলোতে ফসলি জমির মাটি ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। তবে পরিবেশবান্ধব নিয়ম অনুসারে ইটভাটা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন আপত্তি নেই। যে সমস্ত ইট ভাটা পরিবেশবান্ধব নিয়ম না মেনে মাটি বা কাঠ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কেউ যাতে ফসলি জমি থেকে মাটি ও কাঠ না কাটে সেজন্য কঠোরভাবে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। তবে নিয়ম বহির্ভূত কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।