মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জনবান্ধব নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণীয় করে রাখতে একযোগে ৩১টি শহীদ মিনার নির্মাণ করে বৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ও অর্থায়ন এবং উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের কারিগরী সহায়তায় শহীদ মিনার নির্মান কাজের বাস্তবায়ন করা হয় বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন। ৩১ টি শহীদ মিনার নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
এছাড়া পৌরসভার পুরাতন বাস স্টেশনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে “অর্জন” নামে একটি ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় “মুক্তির পথ” নামে একটি দৃষ্টি নন্দন স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ৩১ টি শহীদ মিনারের মধ্যে মির্জাপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মির্জাপুর সরকারি এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দেওহাটা আলহাজ¦ জোনাব আলী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, জামুর্কী এনএসএজি উচ্চ বিদ্যালয়, বানাইল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, আনাইতারা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, সিয়াম একাডেমি চত্বর, হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, অভিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, গায়রাবেতিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরতকিচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এডিএম উচ্চ বিদ্যালয়, বহুরিয়া ইউনিয়নের দিঘলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিবিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুইচতারা এম হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, ছাওয়ালী ভাতকুড়া এম কে এবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বানাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তরফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝোপবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান আছে যা অতিসত্বর সম্পন্ন হবে। এছাড়াও আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরালের কাজ চলমান রয়েছে। আজগানা ও উয়ার্শী ইউনিয়নে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিফলক নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে।
মির্জাপুর পৌরসভার পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে মির্জাপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে নির্মাণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। খান আহমেদ শুভ এমপির অর্থায়নে নির্মিত এই শহীদ মিনারের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান। নির্মান ব্যয় হয়েছে ৩১ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, আমার মনে হয়েছে এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ ও শহীদ মিনার নির্মাণ আবশ্যক। আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজগুলো করার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পেয়েছি। আর এসব কারণেই মির্জাপুর আমার চাকুরিজীবনে অন্যতম স্মৃতি হয়ে থাকবে।
মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এড. মোশারফ হোসেন মনি বলেন, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তামো. হাফিজুর রহমান একজন জনবান্ধব কর্মকর্তা। তিনি মির্জাপুরে যোগদানের পর আমুল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি চেয়ার এবং রেমিট্যান্ট যোদ্ধাদের জন্য অফিসে চেয়ারের ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও শহীদ মিনার স্থাপন করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর পৌরসভা মেয়র সালমা আক্তার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান একজন মহৎ মনের মানুষ। তিনি ন্যায়, নিষ্ঠা, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে জনসেবা করে থাকেন। শহীদ মিনার নির্মানের পাশাপাশি শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ গড়ে তোলেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ করে অত্যন্ত প্রশংসনীয় হয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্তায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়ে এতটা নিষ্ঠা, সততা, আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে পারেন, ইউএনও হাফিজুর রহমান তার উদাহারন। তিনি মির্জাপুরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলোতে ৩১ টি শহীদ মিনার নির্মান করে একটি মহৎ কাজ করেছেন।