মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
রাস্তার পাশে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে শিশু কন্যাকে দত্তক নিতে ১৫ জন নারী পুরুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও সমাজ সেবা বরাবর আবেদন করেছেন। সমাজ সেবা অধিপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস কক্ষে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন, এসিল্যান্ড সুচী রানী সাহা, সমাজ সেবা অফিসার মো. খাইরুল ইসলামসহ গনমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন। শিশুটির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য টাঙ্গাইল জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপচালকসহ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনপত্রগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনী নানা জটিলতার কারনে শিশুটির ভাগ্য এখনো নির্ধারিত হয়নি।
আজ বুধবার (১২ জুলাই) উপজেলঅ সমাজ সেবাধঅধিদপ্তর ও পুলিশ সুত্র জানায়, শিশুটির পিতা কে তা বলতে পারছে না তার মা। ঘটনার ৮ দিনেও তাদের পরিচয় মিলেনি। অমানবিক এই ঘটনার খবর পেয়ে মির্জাপুর থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় ফুটফুটে শিশু ও তার মায়ের চিকিৎসা চলছে কুমুদিনী হাসপাতালে। কুমুদিনী হাসপাতাল কতৃপক্ষ, চিকিৎসক ও নার্সরা পরম মমতা দিয়ে অসহায় মা ও তার শিশু কন্যাকে ঔষধপত্রসহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কতৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাগন বলেছেন মহিলাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রতিবন্ধি মানষিক ভারসাম্যহীন। কোন কিছু ঠিকমত বলতে পারছেন না। গত বুধবার (৫ জুলাই) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বাইমহাটি এলাকায় মহাসড়কের পাশে শিশুটির জন্ম হয়েছে।
কুমুদিনী হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগ এবং শিশু ওয়ার্ডের এনআইসিইউতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মা ও শিশু কন্যার চিকিৎসা চলছে। ওয়ার্ডের নার্স ও চিকিৎসকগন জানান, গত ৫ জুলাই বেলা সারে এগারটার দিকে পুলিশ এক মহিলাকে অসুস্থ্য অবস্থায় প্রসুতি বিভাগের ২৭ নম্বর বেডে ভর্তি করে দিয়ে যান। মহিলা তার নাম ও ঠিকানা বলতে পারছেন না। কখনো বলছেন নাজমা, কখনো ঝুমুর আবার কখনো বলছেন রিজনী। ঠিকানা বলছেন কখনো ঢাকা আবার কখনো বরিশাল। আর কিছু বলতে পারছে না। পিতা মাতার নাম ও নিজের নামও বলতে পারছে না। শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে নার্সরা পরম মমতা দিয়ে শিশু কন্যাকে এনআইসিইউতে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
কুমুদিনী জহাসপাতালে এজিএম (অপারেশন) অনিমেশ ভৌমিক লিটন বলেন, অসহায় এক মহিলা ও তার শিশু কন্যাকে পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছেন। মহিলার নাম ও কোন ঠিকানা নেই। তিনি কোন নাম ঠিকানা বলতে পারছে না। এমন কি শিশুর পিতা কে তাও বলতে পারছেন না। হাসপাতালের পক্ষ থেকে গত ৬ দিন ধরে মা ও শিশুর যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধপত্র এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুমুদিনী হাসপাতালে গিয়ে মহিলার ঠিকানা এবং শিশুর বাবা কে তা জানার চেষ্টা করেছেন। মহিলা কোন কথা বলতে পারছে না এবং ঠিকানাও বলতে পারছেন না। হাসপাতাল কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবন্ধি মা ও শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে। ঘটনার ৮ দিন পরও মা নবজাতক পরিবারের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনী ভাবে নবজাতক ও তার মায়ের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিঃসন্তান নারী পুরুষ কুমুদিনী হাসপাতালে এসে শিশু কন্যার দায়িত্ব নিতে (দত্তক) নিতে ভিড় করছেন। আজ বুধবার পর্যন্ত ১৫ জন নারী পুরুষ শিশু কন্যাকে লালন পালনের দায়িত্ব নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন বলে সমাজ সেবা অফিসার খাইরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, রাস্তার পাশে প্রতিবন্ধি এক মহিলা সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কুমুদিনী হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে মা ও শিশু কন্যার খোঁজ খবর নিয়েছেন। মহিলার পরিবারের ঠিকানা এবং শিশু কন্যার পিতা কে তা জানতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। মা ও শিশু কন্যার চিকিৎসার যেন কোন সমস্যা না হয় সে জন্য হাসপাতাল কতৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫ জন নারী পুরুষ শিশু কন্যার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছেন। আইনী ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মো. মাসুদ করিম বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুলিশ প্রশাসেনর পক্ষ থেকে মহিলা ও তার নবজাতক সন্তানকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে। তবে ১৫ জন নারী পুরুষ আজ পর্যন্ত আবেদন করেছেন শিশু কন্যা দত্তক নেওয়ার জন্য। প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেবেন জেলা প্রশাসক ও জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর।