মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্যাডেট গ্রাউন্ডে কামাল হোসেন (৪৬) নামে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা মারা গেছেন। আজ রবিবার (১ অক্টোবর) মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের প্যাডেট মাঠে তিনি প্রশিক্ষরণকালে অসুস্থ্য হলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর প্রশিক্ষনার্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা প্রশ্নসহ আতংক ছড়িয়ে পরেছে। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর ঘটনা তদন্তের জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা কামাল হোসেনের পিতার নাম মোকছেদ আলী ফকির। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার পাকডাল গ্রামে। তিনি বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তিনি বরিশাল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার ডিসি নম্বর ৪৪ এবং ব্যাচ নম্বর বিপি-৭৭৯৭০১৪৫২৪।
আজ রবিবার মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কর্মকর্তাগন জানান, পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ইউনিটের ২২৩ জন এসআই ও এএসআই ৬ মাস ব্যাপি মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য গত ১৪ এপ্রিল মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে আসেন। আজ রবিবার (১ অক্টোবর) ছিল প্রশিক্ষণার্থীদের চুড়ান্ত পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষায় এক কিলোমিটার দৌড়ানোর পর কামাল হোসেন সফলতা অর্জন করেন। দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অপেক্ষারত অবস্থায় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানে কর্তব্যরত মেডিকেল টিম প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে। ট্রেনিং সেন্টারের বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনেক প্রশিক্ষনার্থীদের পাশ করিয়ে দেওয়া দেন। যাদের টাকা দেওয়ার মত অবস্থা নেই তাদের বিভিন্ন ভাবে প্রশিক্ষনের নামে হয়রানী করা হয়। কামাল হোসেনের মৃত্যু এর একটি কারন বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অচেতন অবস্থায় ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো। ইসিজি করার সময় তার মৃত্যু হয়। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে কামাল হোসেনের শারীরিক নানা সমস্যসহ হার্টের সমস্যা ছিল।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম জানিয়েছেন, মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় এক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। আইনী প্রক্রিয়া শেষে তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ডেন্ট উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. নজরুল ইসলাম এনডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে যথাযত নিয়ম কানুন মেনেই এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় কামাল হোসেন হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পরেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। কামাল হোসেনের মৃত্যুতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যগন তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে বেল তিনি জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোন গাফিলতি ছিল কিনা ঘটনার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত ডিআইজি আশফাকুল আলমকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের পর তার লাশ যথাযোগ্য মর্যাদায় গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালি জেলার বাউফল উপজেলার পাকডাল গ্রামে পাঠানো হয়েছে। রাতেই তার লাশ দাফন করা হয়েছে।