মির্জাপুরে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী মন্টুর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া সেই ইউপি চেয়ারম্যান মামুনকে শোকজ

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী আট বারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে (ট্রাক মার্কায়) যারা ভোট দিবে তারা হবে রাজাকার, মুনাফিক ও বেইমান বলে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়া সেই বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিককে শোকজ করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন ইউপি চেয়ারম্যানকে শোকজ করেচেন বলে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সুত্র রাতে নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে আজ সোমবার দৈ;নিক ইত্তেফাকে মির্জাপুরে এমপির উপস্থিতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে বিষেদগার বিএনপি নেতার শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকামের পর তদন্তে নামেন নির্বাচন কর্মকর্তাগনগন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ঐ ইউপি চেয়ারম্যানকে শোকজ করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের তিন মিনিট চার সেকেন্ডের উস্কানিমুলক এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুকে) ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু গতকাল রবিবার রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে ছিলেন। গত শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে বানাইল ইউনিয়নের হাজিবাড়ি নুরানী মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী এমন বক্তব্য দেন। ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন মো. আইয়ুব হোসেন।
আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ওয়ালামা দলের সদস্য সচিব। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৫ নং বানাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি জালাও-পোড়াও এবং নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হয়ে সম্প্রতি তিনি জামিনে এসেছেন। গত শুক্রবার রাতে বানাইল ইউনিয়নের হাজিবাড়ি নুরানী মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী তার বক্তব্যে বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ ও ভাল লোক নন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আমি ৭০ লাখ টাকার ৪০ টি রাস্তাসহ উন্নয়ন কাজ করেছি। বানাইল ইউনিয়নের রাস্তা উন্নয়নের বরাদ্ধের টাকা, টি আর, কাবিখার টাকা এবং ৫ টি টিউওবওয়েল কেটে নিয়ে অন্যত্র দিয়েছেন। আমাকে জেল খাটিয়েছেন। এমপির উপস্থিতিতে আমি ঘোষনা দিতে চাই স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী মন্টুকে (ট্রাক মার্কায়) যারা বানাইল ইউনিয়ন থেকে ভোট দিবেন তারা হবেন রাজাকার, মুনাফিক ও বেইমান। শুধ তাই নয় মীর এনায়েত হোসেন মন্টু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্ভোধন করা হয়নি। তার বক্তব্যের পর মুসুল্লিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয় ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী (ট্রাক মার্কা) বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী বিএনপির নেতা। সরকার বিরোধী ও নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হয়ে সম্প্রতি তিনি জেল থেকে জামিনে এসেছেন। আমি তিন বারের উপজেলা পরিষদ এবং পাঁচ বারের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এমপি নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী হয়ে আওয়ামীলীগ ও সাধারণ জনগনকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করছি। বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি এমপি নির্বাচিত হবো বলে আশা করছি। একজন এমপির উপস্থিতিতে একজন বিএনপির নাশকতা মামলার আসামী মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছেন। আমি নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার, ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। সহকারী রিটার্নিং অপিসার ঘঠনার সত্যতা পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রাথমিক ভাবে শোকজ করেছেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আর মামুন সিদ্দিকী বলেন, স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালিন আমার ইউনিয়নে উন্নয়নের নামে বরাদ্ধের টাকা কেটে অন্যত্র দিয়েছেন। তিনি দুর্নীতিবাজ ও ভাল লোক নন। তিনি যাতে বানাইল ইউনিয়ন থেকে ভোট না পান সে জন্য এই বক্তব্য দিয়েছিলাম।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকার যাচ্ছেন সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ন নির্বাচন। সকল ভোটার যাতে নির্বিগ্নে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একজন জনপ্রতিনিধি কখনো উস্কানি মুলক বক্তব্য দিতে পারেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আজ সোমবার তদন্ত সাপেক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুনকে শোকজ করা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here