মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চাঞ্চল্যকর ট্রাক চালক নাজমুল ওরফে আজিমুল (৩৫) খুনের রহস্য উৎঘাটন হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত মুল পরিকল্পনাকারীসহ ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মির্জাপুর থানায় জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ট্রাক চালক খুনের সঙ্গে জড়িত ৬ ডাকাতকে গ্রেফতারের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, গতকাল রবিবার ও আজ সোমবার পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় সাড়াশি অভিযান চালিয়ে ডাকাতি ও খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ডাকাত দলের সদস্য ৬ খুনিকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা পেশাদার খুনি ও আন্তজেলা ডাকাত দলের সক্রীয় সদস্য। মির্জাপুর উপজেলার বাইমহাটি, ত্রিমোহন, দেওহাটা, কুমারজানি ও পুষ্টকামুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পেশাদার খুনি ও ডাকাত দলের সক্রীয় সদস্য নাদিম ও সাদ্দাম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। খুনিরা হচ্ছে বাইমহাটি গ্রামের সাইদ কুলেল ছেলে নাদিম (৩১), ত্রিমোহন বান্দরমারা গ্রামের পাষান মিয়ার ছেলেন সাদ্দাম (৩৪), বাইমহাটি গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে ফজল (৩৯), সিংজুরি গ্রামের বোরহান মিয়ার ছেলে সোহেল (৩২), দেওহাটা গ্রামের সামাদ আলীর ছেলে ইয়াসিন (২৩) এবং বাগজান গ্রামের নুরুল হকের ছেলে লাভলু (৩১)। সংবাদ সম্মেলনে মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক মো. আবুল বাশার মোল্লা, অমল কুমার দাস, সোহেল মিয়া এবং সেকেন্ড অফিসার মো. আব্দুল করিম মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার পৌরসভার বাওয়ার কুমারজানী মা সিএনজি স্টেশনের পূর্বপাশে ডাকাতির সময় ট্রাক চালক নাজমুল ওরফে আজিমুলকে নির্মম ভাবে খুন করে ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মির্জাপুর থানা পুলিশ জানায়, ডাকাতের হাতে খুনের শিকার ট্রাক চালক নাজমুল ওরফে আজিমুলের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায় ফুলবাড়ি উপজেলার গোহাইনঘাট গ্রামে। তার পিতার নাম খলিলুর রহমান। গত শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ভুট্টা বোঝাই ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-১১ ৯৩৪৮) নিয়ে বগুড়া যাচ্ছিল। রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাওয়ারকুমারজানি নামক স্থানে পৌঁছালে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কৌশলে একটি বস্তা ও মোবাইল ফোন ডাকাতরা রাস্তায় ফেলে রাখে। ট্রাকের হেলপার আবু তালেব রাস্তায় নেমে আসলে ডাকাতরা তার ওপর হামলা করে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মোবাইল ফোন, টাকা ও মালামাল লুটে নেয়। পরে ডাকাতরা ট্রাকে উঠে চালকের টাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় হেলপার দূরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা দেশীয় ধারালো অস্্র দিয়ে ট্রাক চালককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মালামাল নিয়ে চলে যায়। টহল পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দুইটার দিকে তিনি মারা যান।
এদিকে এ ঘটনায় মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলার পর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এএসএম আবু মনসুর মুসা (মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেল), মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম, ওসি তদন্ত মো. গিয়াস উদ্দিন, সেকেন্ড অফিসার মো. আব্দুল করিম, পুলিশ অফিসার ও উপপরিদর্শক মো. আবুল বাশার মোল্লা এবং অটল কুমার দাসসহ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ হয়ে ডাকাত ও খুনিদের ধরতে সাড়াশি অভিযানে নামেন। সাড়াশি অভিযানে মহাসড়কে ডাকাতি ও খুনের সঙ্গে জড়িত নাদিম, সাদ্দাম, ইয়াসিন, ফজলু ও লাবুকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে নাদিম ও সাদ্দামকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবান বন্ধির জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি এবং ট্রাক চালককে খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে থানায় মামলা হয়। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এএসএম আবু মনসুর মুসা (মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেল) এর দিক নির্দেশনা ও পরামর্শে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে খুনের মুল পরিকল্পনাকারী ও ৬ ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদরে মধ্যে আসামী ও ডাকাত ইয়াসিন ও লাভলুকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।