মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আলমোহনা ক্লিনিকে রাশেদা আক্তার মুক্তি (২৬) প্রসুতির মৃত্যুর পর অব্যবস্থাপনা, চরম অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগে ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছেন। গত রবিবার (১৭ মার্চ) রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কি এলাকায় সরকারী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্্র সংলগ্ন আলমোহনা হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকে প্রসুতির এ মৃত্যুর হয়। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। টাঙ্গাইল জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিসের একাধিক টিম ঐ ক্লিনিক পরিদর্শন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) মৃতৃ্যু বরণকারী প্রসুতি রাশেদা আক্তার মুক্তির স্বামী সাইফুল ইসলাম জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার হিলড়া আদাবাড়ি গ্রামে। গত বছরের মার্চ মাসে তাদের অষ্টম শ্রেণী পড়া কন্যা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়। তার পর তার বাবাও মারা যায়। কন্যা ও বাবার মতৃ্যুর মোশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার স্ত্রীর মৃত্যু। কি ভাবে আমি বেঁচে থাকবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। প্রসব ব্যথা নিয়ে গত রবিবার স্ত্রী রাশেদা আক্তারকে জামুর্কি আলমোহনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও এনেথসেথিয়া ছাড়াই ভুয়া চিকিৎসক, নার্স ও আয়া দিয়ে দুপুর একটার দিকে তাকে সিজার করা হয়। সিজারের পর রাশেদার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখন হাসপাতালে কোন চিকিৎসক ও নার্স ছিল না। রাশেদা আক্তারের পুত্র সন্তান হলেও পরে তার জ্ঞান ফিরে আসেনি। রাতেই সে মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর নবজাতকের অবস্থাও আশংকা জনক। অবস্থা ভাল না থাকায় নবজাতকে সাইফুলের বোনের কাছে রাখা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কন্যা, বাবা ও স্ত্রীর মারা যাওয়ার শোকে সাইফুল ইসলাম যেন পাথর হয়ে গেছে। শুধূ সাইফুল ইসলাম নয়, পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। তাদের শান্তনা দেওয়ার মত ভাষা যেন কারও নেই। তাদের বুক ফাঁটা কান্নায় চার পাশের বাতাস ভারি হয়ে আসছে। সাইফুল ও তার পরিবারের দাবী প্রতারনার ফাঁদে ফেলে ভাল চিকিৎসার নামে ক্লিনিকের ভুয়া চিকিৎসক, নার্স ও আয়া দিয়ে ভুল অপারেশন ও ভুল চিকিৎসায় রাশেদার মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিকের মালিককে অবিলম্বে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।
এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার আলমোহনা ক্লিনিকের মালিক জাহিদুল ইসলাম ও শামীম মিয়ার সঙ্গে বিস্তারিত জানার জন্য টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা বার বার টেলিফোন কেটে দেন। প্রসুতির মৃত্যুর পর থেকেই হাসপাতালের মালিকপক্ষ গা ঢাাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আলমোহনা হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে প্রসুতির মৃতুর অভিযোগ আসায় ঘটনার তদন্তের জন্য সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর মেডিকেল অফিসার ও কনসালটেন্ট বর্নালী দাসকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন ডা. মোহাম্মদ আলী এবং সেনেটারী পরিদর্শক ইসরাত জাহান। তদন্তে তারা প্রসুতির মৃত্যুর জন্য অব্যবস্থাপনা পেয়েছেন। প্রসুতির সিজারের সময় কোন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক, এনেসথেসিস ও নার্স ছিল না। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আনিছুর রহমান আছিন বলেন, মির্জাপুরে ৩০ টি ক্লিনিক রয়েছে। অধিকাংশ ক্লিনিকে সরকারী নিয়ম মাফিক চিকিৎসা চলে আসছে। ভুলক্রমে হয়তো ঐ হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এটা ঠিক নয় বলে তিনি দাবী করেন।