মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে ফরহাদ মিয়া নামে এক সিংগাপুর প্রবাসির স্ত্রী সুমনা আক্তার (২৫) নরমাল ডেলিভারির সময় এক সঙ্গে ৬ সন্তান প্রসব করেছেন। ৬ সন্তানের মধ্যে ৪ জন কন্যা সন্তান এবং ২ জন পুত্র সন্তান। হাসপাতালে ৬ সন্তান জন্মের কিছুক্ষণ পরেই মারা যায়। ৬ সন্তান মারা যাওয়ায় পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ৬ সন্তান মারা গেলেও মায়ের অবস্থা এখন সুস্থ্য বলে হাসপাতালের চিকিৎসকগন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদের দিন দুপুর ১২ টার দিকে কুমুদিনী হাসপাতালে প্রসুতি বিভাগে এই ৬ সন্তানের জন্ম হয়। এক সঙ্গে ৬ সন্তান জন্মদানের এই বিরল ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সখীপুর উপজেলা উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাজাহান মিয়া জানান, গৃহবধু সুমনা আক্তারের স্বামীর নাম ফরহাদ মিয়া। গ্রামের বাড়ি সখীপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের কালমেঘা কড়ইতলা সলঙ্গা গ্রামে। ফরহাদ মিয়া দীর্ঘ দিন সিংগাপুর প্রবাসি। কিছু দিন পুর্বে তিনি ছুটিতে বাড়ি আসেন। ছুটি শেষে আবার সিংগাপুর চলে যান। গত ৫ মাস যাবত গৃহবধু সুমনা আক্তার অন্তসত্তা ছিলেন। এরমধ্যে সুমনা আক্তার অসুস্থ্য হয়ে পরেন। ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গেলে আলটা সনোগ্রামে তার গর্ভে ৪ সন্তান রয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন। আজ বৃহস্পতিবার ঈদের দিন সকালে বাড়িতে সুমনা আক্তার পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। বাড়ির লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকগন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে রেফার করেন। এখানে দুপুরে ভর্তির পর চিকিৎসকগন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখতে পান তার গর্ভে ৬ সন্তান রয়েছে। পরে নরমাল ডেভিভারির মাধ্যমে ৬ সন্তান প্রসব হলেও কিছুক্ষণ পরেই তাদের মৃত্যু হয়। শিশু সন্তানদের বয়স পুর্ন না হওয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বরে কুমুদিনী হাসপাতালেল চিকিৎসকগন জানেিয়ছেন। তবে প্রসুতি মা সুমনা আক্তার পুরোপুরি সুস্থ্য আছেন।
এ ব্যাপারে প্রবাসির স্ত্রী গৃহবধু সুমনা আক্তারের শ^াশুরী ফিরোজা বেগম বলেন, আমার ছেলের বৌ খুবি পর্দাশীল এবং নামাজি ও ধার্মীক। আমার ছেলের ঘরে পুর্বে সন্তান নেই। অনেক দিনের আশা ছিল আমার পুত্রবধুর ঘরে সন্তান এসে আমাদের পরিবারের মুখ আলো করে তুলবে। আমাদের সব আশা ভরসা শেষ হয়ে গেছে। প্রথম সন্তান হলেও ৬ সন্তান মারা যাওয়ায় আমাদের পুরো পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এখন আমার পুত্রবধুকে বাঁচানোই প্রধান কাজ।
এ ব্যাপারে কুমুদিনী হাসপাতালেল এজিএম (অপারেশন) অনিমেশ ভৌমিক লিটন বলেন, গৃহবধু সুমনা আেক্তার আজ বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন আমাদের সকল চিকিৎসক ও নার্সসহ কতৃপক্ষ। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ৬ সন্তান হয়েছিল। অপরিপক্ষ থাকায় তাদের গর্ভেই মৃত্যু হয়েছিল। প্রসুতি মা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় যে সব মহিলাদের দীর্ঘ দিন সন্তান হয়না তারা বিভিন্ন সময় ক্লিনিক বা হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে ঔষধপত্র সেবন করে থাকেন। জেনেটিক্যাল সমস্যা জনিত কারনে এবং ঔষধের পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কারনেও বেশী সন্তান গর্ভধারন করে থাকেন। পুর্ন সময় হওয়ার আগেই তারা জন্ম গ্রহণ করে এবং পরে মারা যায়। এই মহিলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।