মির্জাপুরে উন্নয়ন বঞ্চিত দেওহাটা বৃহৎ পশুর হাট ও বাজার

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার শত বছরের পুরনো দেওহাটা পশুর হাট ও বাজারের উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। রাস্তা-ঘাটের খুবই করুন অবস্থা। বছর বছর সরকারি রাজস্ব বাড়লেও উন্নয়ন হয়নি হাট ও বাজারের। চলাচলের ক্ষেত্রে এই বাজারের ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই কোমর পানিতে ডুবে থাকে গরুর হাট।
আজ বৃহস্পতিবার দেওহাটা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি রাস্তা কাঁদা-পানিতে সয়লাভ এবং পশুর হাটে জলাবদ্ধতা হয়ে চলাচলের অনুপযোগি। ভুক্তভোগি ১৫-২০ জন ব্যবসায়ী এবং হাট ও বাজারে আসা অন্তত ২০ জন এলাকাবাসি জানান, মির্জাপুর পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে শত বছরের পুরনো দেওহাটা পশুর হাট ও বাজারটি অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন। হাট ও বাজারটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় প্রতি দিন হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম হয়। এখানে প্রতি মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বিশাল একটি পশর হাট বসে। বাজার বসে নিয়মিত প্রতি দিন। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে গরুর হাট ডুবে যায়। গরুর হাটে টাঙ্গাইল, ভুয়াপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ এবং ঢাকা জেলার বেপারিরা গরুর জন্য আসে। এছাড়া বসে নিয়মিত কাঠের হাট। পৌরসভা এবং উপজেলার গোড়াই, বহুরিয়া, লতিফপুর, তরফপুর, আজগানা এবং ভাওড়া ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন। হাটের পাশেই রয়েছে পৌরসভা ও গোড়াই ইউনিয়ন দুটি ভুমি অফিস, ১০ নম্বর গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদ, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি পুলিশ ফাঁড়ি, বেশ কয়েকটি মসজিদ-মাদ্রাসা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। প্রতি বছর সরকার এই হাট থেকে ৪০-৫০ লাখ টাকা ইজারা দিয়ে রাজস্ব পেয়ে আসছেন। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও গুরুত্বপুর্ন এই হাটের রাস্তা-ঘাটের কোন উন্নয়নের ছোয়া পড়েনি। কাঠ বাজার, মাছ বাজার, গরুর হাট, ভুমি অফিস রোড, ইউনিয়ন পরিষদ রোড সারা বছর কাঁদা-পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগি থাকে। আবার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন রাস্তার পাশ দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
এ ব্যাপারে দেওহাটা বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী ও হাটের ইজাদার এবং ১০ নং গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. কামরুজ্জামান (জামান মেম্বার) বলেন, প্রতি বছর এই হাটের সরকারি রাজস্ব আয় বাড়ানো হয়। চলতি বছরও এই হাট থেকে ৫৫ লাখ টাকার রাজস্ব নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। হাটের উন্নয়ন বলতেই কিছুই হচ্ছে না। রাস্তায় কাঁদা পানি জমে করুন দশা। রাস্তার উন্নয়ন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দুরের কথা, সাধারন মানুষের পায়ে হেঁটে চলাই দুষ্কর। একটু বৃষ্টি হলেই কাঠের বাজার ও গরুর হাট পানিতে তলিয়ে যায়। চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগের শেষ নেই। একই অভিযোগ করেছেন সমিল শ্রমিকের সদস্য মো. ইয়াকুব আলী, শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মো. সুলতান উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তি। দেওহাটা হাটের রাস্তা-ঘাট এবং গরুর হাট দ্রুত উন্নয়নের জন্য এলাকাবাসি ও হাটের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, উপজেরা পরিষদেও চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ১০ নং গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ (পশ্চিম) এর সভাপতি আলহাজ¦ হুমায়ুন কবীর বলেন, দেওহাটা হাট-বাজারটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বেশী। এখানে সপ্তাহে মঙ্গলবার বিশাল পশুর হাট বসে। মহাসড়কটি থেকে হাট নিচু হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। মাটি ভরাটের জন্য যে পরিমান ার্থ প্রয়োজন ইউনিয়ন পরিষদে সে পরিমান অর্থ নেই। অর্থ সংকটের কারনে হাটের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, দেওহাটা হাট ও বাজারটি পুরনো এবং অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন। এই হাট থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমান রাজস্ব পেয়ে আসছে। হাটের রাস্তা-ঘাটের খুবই দুরবস্থা। রাস্তা থেকে হাটটি নিচু। মাটি ভরাটের ব্যবস্তা করতে হবে। দীর্ঘ দিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় রাস্তা দিয়ে চলাচল অনুপযোগি হয়ে পরেছে। হাট ও রাস্তা-ঘাট উন্নয়নের জন্য প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here