মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে কোটা সংস্কার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানা পোড়ানো ও কলেজ ছাত্র ইমন (১৮) হত্যা মামলার আসামী পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছে। চেয়ারম্যানগন পলাতক থাকায় ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নির্তে আসা শতশত লোকজন সেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই মামলায় আসামী সাবেক দুই মন্ত্রী ও সাত এমপিসহ আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ৫০০শ নেতা পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামীরা হচ্ছেন ১০ নং গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোড়াই ইউনিয়নের (পশ্চিম) সভাপতি হাজী হুমায়ুন কবীর, ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আব্দুল কাদের সিকদার, ০৩ নং ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আব্দুর রউফ মিয়া, ০৭ নং ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল এবং ০৬ নং আনাইতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল ময়নাল হক।
পাঁচ ইউনিয়নের ভুক্তভোগি অন্ততপক্ষে ১৫ জন নারী পুরুষ অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন পদ। নাগরিক সনদপত্র, জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদপত্র, গ্রাম্য বিচারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিদিন তারা পরিষদে আসছেন। কিন্ত চেয়ারম্যান অনুপন্থিত থাকায় কোন সেবাই তারা পাচ্ছেন না। চেয়ারম্যানগন পলাতক থাকায় দিনের পর দিন পরিষদে এসে তাদের চরম দুর্ভোগ ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। বিষয়টির দিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবী জানিয়েছেন।
মির্জাপুর থানায় দায়ের করা মামলার বিবরনে জানা গেছে, গোড়াই হাইওয়ে থানা পোড়া ও কলেজ ছাত্র ইমন হত্যা মামলায় পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাড়াও সাবেক দুই মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনি, সাবেক এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, সাবেক এমপি ছানোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও সাবেক এমপি অনুপম শাজাহান জয়, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তসহ ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামী আরও ৪০০/৫০০ জন রয়েছে। মামলার পর গ্রেফতার আতংকে পলাতক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ জানায়, নিহত ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন মন্ডল বাড়ী এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে। তিনি অলোয়া মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ইমন গোড়াই এলাকায় একটি পোষাক কারখানায় কাজ করতেন। গত ৪ আগস্ট বিকেলে গোড়াই হাইওয়ে থানায় একদল দুস্কৃতিকারী হামলা করে। এসময় ওই স্থানে শান্তিপুর্ণ সমাবেশ করছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। দুস্কৃতিকারীরা থানা ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের সাথে দুস্কৃতিকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় ইমন পেটে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৮ আগস্ট ভোরে সে মারা করেন।
মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল ইসলাম আলমগীর, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান সোহেল সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত সহকারী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর আসিফ অনিক, হংকং প্রভাসি সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন, টাঙ্গাইল জেলা যুব লীগের সহসম্পাদক মঈন হোসেন রাজীব, মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সেতাব মাহমুদ।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত মো. মোশারফ হোসেন বলেন, গোড়াই হাইওয়ে থানা পোড়ানো ও নিহত কলেজ ছাত্র ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় ১৫৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০/৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর সাবেক চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া, পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল জলিল ও আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে উপজেরা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ নুরুল আলম বলেন, পলাতক ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।