মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলর মির্জাপুরে সপ্তম শ্রেণীর মাদ্রাসা ছাত্র সিফাত হোসেন চাঞ্চল্যকর হত্যার ৬ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ ক্লুলেন্সের মাধ্যমে মুল রহস্য উৎঘাটন করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতক মেহেতাব মিয়া (১৮) এবং আবু তালেব সিদ্দিকী তালেকে দেশীয় অস্্রসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘাতকদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সিফাতের এনড্রয়েড মোবাইল ফোন। গ্রাম্য শালিসে জুতা পেটা এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা- এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই ঘাতকরা দল বেঁধে সিফাতকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। আজ বুধবার (৩১ আগস্ট) মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিফাত হত্যার বিস্তারিত গরমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন। এ সময় ওসি (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন, সেকেন্ড অফিসার মো. মোশরাফ হোসেন, ডিএসবির এসআই মো. রেজাউল ইসলাম, এসআই সাইফুল ইসলাম, আবুল বাশার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু সাইদসহ পুলিশেরে অন্যান্য কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মো. সরফুদ্দিন এবং সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেল) এ এস এম মনসুর মুসার দিক নির্দেশনায় চাঞ্চল্যকর সিফাত হত্যা মামলার রহস্য উৎঘাটন এবং ঘাতকদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, সিফাতের পিতার নাম মো. শহিদুর রহমান। গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামে। সিফাত মির্জাপুর উপজেলা সদরের আফাজ উদ্দিন দারুল উফুম সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। গত সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে ফুসকা খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে সিফাত মির্জাপুর বাইপাস রেল স্টেশনের পাশে আসে। রাত এগারটার দিকে রেললাইনের ব্রিজের পাশে সিফাতের লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ঘাতকরা পুলিশকে জানিয়েছে, গত ১৮ আগস্ট সিফাত বংশাই নদীতে গোসল করতে গিয়ে বখাটে হিরনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনায় বখাটে হিরন ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে সিফাতকে বেদম প্রহার করলে তার একটি হাত ভেঙ্গে দিলে সে অসুস্থ্য হয়ে পরে। পরে তাকে মির্জাপুর সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় গ্রাম্য শালিসে বখাটে হিরনকে স্থানীয় মাতাব্বরগন শাসন করে জুতাপেটা করে। শালিসে জুতাপেটার অপমানের প্রতিশোধ এবং পুর্ব শত্রুতার ক্ষোভে বখাটে হিরন ও তার সহযোগিরা সিফাতকে ধরে নিয়ে পায়ু পথে বাতাস ও লাঠি ঢুকিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর নির্মম ভাবে হত্যা করে লাশ মির্জাপুর রেল লাইনের পাশে ধনিচা ক্ষেতে ফেলে গুম করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় সিফাতের লাশ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে নিহত সিফাতের বাবা শহিদুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২০, ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। মামলার পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঘাতক মেহেতাব মিয়া ও আবু তালেব সিদ্দিকী তালেকে গ্রেফতার করেছে। মুল ঘাতক হিরন ও তার সহযোগিদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মো. আবু সাইদ বলেন, গ্রেফতারকৃত দুই আসামী মেহেতাব মিয়া ও আবু তালেব সিদ্দিকী তালেকে আজ বুধবার (৩১ আগস্ট) টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শামসুল আলমের আমলী আদালতে হাজির করা হলে মেহেতাব মিয়া স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্ধি দিয়েছে। এছাড়া চাঞ্চল্যকর এই হত্যার সঙ্গে আরও পাঁচজন জড়িত বলে সে বিচারককে জানায়। পরে বিচারক তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর আসামী আবু তালেব সিদ্দিকী তালেকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী রবিবার শুনানীর দিন ধার্য করেছেন। সিফাত হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে সিফাত হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে ফুসে উঠেছে। তার পরিবার, এলাকাবাসি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তার শিক্ষক ও সহপাঠিরা ঘাতকদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, মাদ্রাসা ছাত্র সিফাত হত্যার মুল রহস্য উৎঘাটন হয়েছে। দুইজনকে গ্রেফতারের পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অপর আসামীদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন।