মির্জাপুরে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর অবৈধ চুল্লি ধ্বংস,একজনকে বিশ হাজার টাকা জরিমানা

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারী বনাঞ্চলের আশপাশে শতাধিক অবৈধ কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর মহোৎসব চলছে। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর ফলে একদিকে যেমন বনাঞ্চল ধ্বংস করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, তেমনি কয়লার চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত কাল ধোয়ায় এলাকার পুরিবেশ মারাত্বক হুমকির মুখে পরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোপন সংবাদ পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া তেলিনা জলকুটির ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় অসাধু চক্রের সদস্য হাবিবুর রহমান (৪৫) নামে একজনকে আটক করে বিশ হাজার টাকা জরিমনা করা হয়েছে। অভিযানের খবর পেয়ে অনেকেই পালিয়ে যায় বলে ভুমি অফিসের কর্মচারীগন আজ শুক্রবার জানিয়েছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আমিনুর ্টসিলাম বুলবুল এবং, গোপন সংবাদ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আজগানা ইউনিয়নের কুুড়িপাড়া জলকুটির ও তেলিনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০-১২ টি অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় হাবিবুর রহমানকে আটক করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বনবিভাগ সুত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৮০০শ হেক্টর সরকারী বন ভুমি রয়েছে। বিশাল এই বন ভুমিতে গজারি, গর্জন, সেগুন, আকাশমনি, পিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান গাছ রয়েছে। এছাড়া সমাজিক বনায়ন কর্মসুচীর আওতায় বনাঞ্চল ও এর আশাপাশে প্রচুর বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে।
আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের সিকদার ও ভুক্তভোগি একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সরকারী বিধান মতে বনাঞ্চলের আশপাশের ১০ কি. মি. এর মধ্যে ইটভাটা, করাত কল এবং কয়লা তৈরীর চুল্লি স্থাপন নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করেই চলছে এ ব্যবসা। চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে মির্জাপুর উপজেলার গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, পেকুয়া, মুচিরচালা, বাঁশতৈল, বংশীনগর, বালিয়াজান, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর, খুইদারচালা, ঘাগড়াই কুড়াতলী ও খাটিয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার বনের আশপাশে অবৈধ ভাবে কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরী করে আসছে। শতাধিক কয়লার চুল্লিতে প্রতি দিন ৫-৬ টন কয়লা তৈরী হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। কয়লার তৈরীর ফরে বিষাক্ত কাল ধোয়ায় ঐ সব এলাকায় বসবাস করা হুমকির মুখে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে বনজ সম্পদ ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং আশপাশের গ্রামের গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট হয়ে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পরেছে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগ মির্জাপুর রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জ অফিসার মো. আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন সংরক্ষক এবং সহকারী বন রক্ষক মহোদয়ের নির্দেশনায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, বাঁশতৈল, বংশীনগর, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর ও খাটিয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতিপুর্বে অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আজগানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। বন রক্ষার জন্য তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বনাঞ্চলের ভিতরে ও আশপাশে অবৈধ ভাবে কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর সুযোগ নেই। যখনই খবর পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল টিমের মাধ্যমে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কয়লা তৈরীর অবৈধ চুল্লি গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here