মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
ভাড়াটিয়া বাসার মেঝেতে পড়েছিল মায়ের নিথর দেহ। দরজার বাহিরে শিকল দেওয়া বদ্ধ ঘরেই লাশের পাশেই বসে অঝোঁরে সারা রাত কাঁদছিল সাত বছরের শিশু পুত্র আসিফ। খবর পেয়ে পুলিশ গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করলেও ঘটনার পর থেকেই দ্বিতীয় স্বামী মুয়াজ পলাতক রয়েছে। কি কারনে বা কেন গৃহবধু খুনের শিকার হলেন এ রহস্য নিয়ে পুলিশও পরেছে বিপাকে। ঘটনার রহস্য উৎঘাটন করতে পারেননি। আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজাগানা ইউনিয়নের হাটুভাঙ্গা এলাকার বেলতৈল গ্রামে এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) খুনের শিকার আনোয়ারা বেগমের বড় ভাই আবুল হোসেন জানান, তার পিতার নাম মো. মকবুল হোসেন। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার সৈয়দগ্রাম। ১১ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। আনোয়ারা বেগমের প্রথম স্বামীর নাম পলাশ মিয়া। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাদের ঘরে আসিফ নামে পুত্র সন্তান হলে পারিবারিক ঝামেলায় ছাড়াছাড়ি হয়। পুত্র আসিফের বয়স এখন (৭) বছর। পরিবারের অভাব অনটনের মধ্যে দু,মুঠো ভাতের জন্য সন্তান নিয়ে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে পোষাক কারখানা এবং হাটুভাঙ্গা এলাকায় বিভিন্ন মিলে শ্রমিকের কাজ করতো। গত কোরবানী ঈদের সময় চিতেশ^রী এলাকার নুরজাহান বেগম নামে এক ঘটকের মাধ্যমে মুয়াজ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বোন আনোয়ারার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিয়ের পর হাটুভাঙ্গা বেলতৈল গ্রামে শহিদ মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। গতকাল মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাতের খাবার খেয়ে স্বাস্বী ও সন্তান নিয়ে বাসায় ঘুমিয়ে পরে। রাতের কোন এক সময় তার বোন আনোয়ারা বেগমকে নির্মম ভাবে খুন হয়। খুনের পর লাশ ঘরের মেঝেতে রেখে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। সারা রাত মায়ের লাশের পাশে বসে ৭ বছরের শিশুপুত্র আসিফ কাঁদছিল। মাকে হারিয়ে শিশু আসিফ এখন বাকরুদ্ধ।
এদিকে আজ বুধবার সকালে শিশুর কাঁন্নার শব্দ পেয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রী দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন মেঝেতে তার বোন আনোয়ারা বেগমের লাশ পড়ে আছে। ঘটনার পর থেকেই দ্বিতীয় স্বামী পলাতক রয়েছে। বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দেয়। মির্জাপুর থানা পুলিশ ও সিআইডির একটি দল ঘটনাস্থালে গিয়ে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। দুপুরের দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে গেছেন। তার নিরীহ ও অসহায় বোনকে কেন হত্যা করা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তিনি ন্যায় বিচার এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন। তিনি বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার পুলিশ অফিসার (উপ পরিদর্শক) মো. জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অপ মৃত্যুর মামলার প্রস্তুতি চলছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে নিয়মিত মামলা হবে। ঘটনার পর থেকেই স্বামী পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, হত্যার মুল্য কারন এখনও জানা যায়নি। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট হত্যার রহস্য উৎঘাটানের জন্য কাজ করছেন। অপমৃত্যুর অভিযোগ হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে নিয়মিত মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।