মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল,
আজ শুক্রবার (৪ নভেম্বর) উত্থান একাদশী ও তিথি অনুযায়ী উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, শহীদ দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহার) ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তী। এ উপলক্ষে তার নিজ গ্রাম টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, তার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী কমপ্লেক্্র, নারী জাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ভারতেশ^রী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও বিএসসি নার্সিং কলেজ এবং তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও নারানগঞ্জে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহান এই দানবীরের ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে কুমুদিনী পরিবার এবং মির্জাপুর গ্রামবাসি কুমুদিনী কমপ্লেক্্ের তার প্রতিকৃতিতে পুষ্প স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বিকেল তিনটায় মির্জাপুর গ্রামে রণদা নাট মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে তার কর্মময় জীবনের উপর আলোচনাসভা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। উপস্থিত থাকবেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লি এর নির্বাহী পরিচালক শ্রী রাজিব প্রসাদ সাহা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিভা মুৎসুদ্দি। সভাপতিত্ব করবেন কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায়।
আজ শুক্রবার (৪ নভেম্বর) কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক এবং রণদা নাট মন্দির শ্রী শ্রী হরিসভা কমিটির সভাপতি ডা. প্রদীপ কুমার রায় জানান, দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালে মির্জাপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্র পোদ্দার এবং মায়ের নাম কুমুদিনী দেবী। দরিদ্র পরিবারের জন্মের পর অভাব আর দারিদ্রের মাঝে বড় হয়ে তিনি দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। যুদ্ধের সময় ভারতের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তিনি ভারতে চলে যান। তার সাহস আর সততার জন্য ঐ ব্যবসায়ী রনদা প্রসাদ সাহাকে তার সম্পত্তির দেখা শোনার দায়িত্ব দেন। এভাবেই তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হন।
এ দিকে প্রচুর অর্থের মালিক হলেও তিনি সে টাকা নিজের কাজে ব্যয় করেননি। তার সমুদয় সহায় সম্পদ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দান করে যান। তিনি সেবার ব্রত নিয়ে দেশ দেশের কল্যাণের জন্য নিজেকে আন্তনিয়োগ করেন। তিনি মির্জাপুর ও দেশের জনসাধারনের সেবার জন্য গড়ে তুলেন কুমুদিনী হাসপাতাল, নারী শিক্ষার জন্য ভারতেশ^রী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা বিশ^বিদ্যালয়, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ, নারায়নগঞ্জে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্রে কলেজ, টাঙ্গাইল কুমুদিনী মহিলা কলেজ, মির্জাপুর মহাবিদ্যালয় বর্তমানে মির্জাপুর সরকারী কলেজ, মির্জাপুর এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে মির্জাপুর এস কে পাইলট মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রীয় ভাবে অংশ নিয়ে দেশ মার্তৃকার জন্য ঝাপিয়ে পরেন। যুদ্ধের সময় তার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে বহু নারী পুরুষ আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা সেবা পান। ১৯৭১ সালের ৭ মে এদেশের কিছু রাজাকার আল বদর বাহিনী ও পাকিস্তানী দোষররা মহান এই মানুষ দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। আজও তাদের কোন খোঁজ মিলেনি। দানবীর রনদা প্রসাদ সাহার ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তীকে ঘিরে প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমুদিনী পরিবার ও মির্জাপুর গ্রামবাসি।
এ দিকে এ বছর দানবীরের ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে তার তীর্থ স্থান কুমুদিনী কমপ্লেক্্র, ভারতেশ^রী হোমস, নার্সিং স্কুল ও কলেজ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এবং মির্জাপুর গ্রামে নানা সাজে সজিজত করা হয়েছে। সকালে প্রার্থনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসুচী, কাঙ্গালী ভোজ, হাসপাতালের রোগীদের মাঝে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। মির্জাপুর গ্রামে বিকেল তিনটায় রণদা নাট মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে তার কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট্র অব বেঙ্গল (বিডি) লি. এর পরিচালক (শিক্ষা) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিভা মুৎসুদ্দি, কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লি এর নির্বাহী পরিচালক শ্রী রাজিব প্রসাদ সাহা, পরিচালক শ্রী মতি সাহা, পরিচালক সম্পা সাহা, কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায়সহ ভারতেশ^রী হোমসের শিক্ষকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগন।