মির্জাপুরে বাড়ির চারপাশে বেড়া দেওয়ায় এক নিরীহ পরিবার অবরুদ্ধ, ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়েছে সাইন বোর্ড

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল,
একদল সন্ত্রাসী মহড়া দিয়ে মোহাম্মদ মামুন সিকদার নামে এক নিরীহ পরিবারের বাড়ির চারপাশে বেড়া দেওয়ায় পুরো পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পরেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে দেশী অস্্র নিয়ে মহড়া দিয়ে আজ মঙ্গলবার ঝুঁলিয়ে দিয়েছে সাইন বোর্ড। গতকাল সোমবার কেটে দেওয়া হয়েছে বাসাবাড়ির পানির লাইন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ। সরকারী সেবা সংস্থা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ায় পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা ঐ পরিবারের সদস্যদের প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা স্কুলে যেতে পারছে না এবং তার পুত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের ১০ নং গোড়াই ইউনিয়নের গন্ধ্যবপাড়া গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছ।
আজ মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে। সোহাগপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাদিয়া আক্তার জানান, গোড়াই মৌজার ৮৫৫ খতিয়ানের পাঁচ দশমিক ৬৬ শতাংশ জমির তারা বৈধ মালিক। সেলিম ও তার পরিবারের নিকট থেকে ক্রয় করে তারা এই জমির মালিক। সমস্ত বৈধ দলিলসহ কাগজপত্র রয়েছে। জমির উপর তাদের বহুতল ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। তার স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়ে গতকাল সোমবার এবং আজ মঙ্গলবার পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে একই এলাকার সেলিম সিকদার, লাবু, মজিদ, আনোয়ার, সকু মিয়া, আরিফ, পাপ্পু, মজিবর ও সুব্রতসহ ২৫-৩০ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্্র নিয়ে বাড়ির চারপাশ ঘেরাও করে খুঁটি, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বেড়া দিয়ে তাদরে অবরুদ্ধ করে ফেলে। সন্ত্রাসী এই বাহিনী বাসার পানির সাপ্লাইয়ের লাইনে পাইপ কেটে ফেলে এবং বিদ্যুতের মিটার ভেঙ্গে লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আজ মঙ্গলবার আবার ঐ সন্ত্রাসী বাহিনী এসে বাড়ির সামনে সাইবোর্ড ঝুঁলিয়ে দিয়ে হুমকি দিয়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরকারী জনসেবা সংস্থা ৯৯৯-এ পুলিশকে ফোন দিলে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। স্কুল শিক্ষিকা সাদিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি স্কুলে যেতে পারছেন না এবং তার ছেলে শিহাব এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতেও যেতে পারছে না। বাসা বাড়ির চারপাশে বেড়া দেওয়ায় গত দুই দিন ধরে তারা অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে এবং সন্ত্রাসীদের চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মামুন সিকদার বলেন, সন্ত্রাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে তার পরিবারকে নির্যাতন করে আসছে। তিনি বাড়িতে না থাকায় এলাকার বিশেষ প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে সন্ত্রাসীরা বাসাবাড়ির চারপাশ বেড়া দিয়ে ঘেড়াও করে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। আজ মঙ্গলবার আবার স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ মদদে অস্্েরর মহড়া দিয়ে বাড়ির গেইটের সামনে সাইন বোর্ড ঝুঁলিয়ে রেখে হুমকি দিয়ে গেছে। পরিবারের নিরাপত্তা এবং ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য তিনি বিকেলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ভেটমাটি রক্ষা এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি দ্ধারে দ্ধারে ঘুরছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেলিম সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেণ, আমরা স্থানীয় দেলোয়ারা, শোভা খাতুন ও উজালার নিকট থেকে তিন দশমিক ৬৬ শতাংশ জমি পাওয়ার করে নিয়েছি। তিনি সাইন বোর্ড দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। অভিযুক্ত লাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিন বলেন, মামুন সিকদার এবং এলাকার সেলিম সিকদার, মজিদ ও আনোয়ারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধ মিমাংশা করার জন্য। মামুনের বাসাবাড়ি বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে কেন প্রশ্ন করা হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) এসআই মো. আইয়ুব হোসেন খান বলেন, ৯৯৯ এ ফোন পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। তবে বাসাবাড়ির চারপাশে বেড়া দেওয়ার পর প্রধান গেইটের কিছু অংশ যাতায়াতের জন্য ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় ডাকা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here