মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধি বর-কনের ব্যতিক্রমধর্মী জাঁকজমকপুর্ন বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। নব-দম্পত্তির দীর্ঘ দিনের ভালবাসা এবং পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সামাজিক ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে ঢাকা বিশ^দ্যিালয়ৈর মেধবাবী শিক্ষার্থী নব-দম্পত্তি আনিসুর রহমান ও হাসনাকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পকির্তত সংসদয়ি স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ। বিয়ের অনুষ্ঠানে নব-দম্পত্তির পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। গতকাল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১০ নং গোড়াই ইউনিয়নের কদিম দেওহাটা গ্রামের সোরাইয়া বেগমের বাড়িতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী নব-দম্পত্তি দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আজ শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সোরাইয়া বেগম জানান, হাসনার পিতার নাম ময়সের আলী। তার বাবার মৃত্যুর পর তিনি হাসনাকে মানুষ করেছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হওয়ায় লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন তিনি। স্থানীয় ইউপি মেম্বার মজিবর রহমান, ইসরাফিল ও জাহাঙ্গীর আলমের সার্বিক সহযোগিতায় নিজের বাড়িতে গতকাল শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন। ইচ্ছা ও প্রতিভা থাকলে সব কিছুই সম্ভব হাসনা তার দৃষ্টান্ত উদারন দিয়ে সোরাইয়া বেগম বলেন, ২০১২ সালে মিরপুর গালর্স স্কুল থেকে মানবিকে এসএসসি, ২০১৪ সালে আইডিয়াল ল্যাবটরি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ঢাকা বিশ^দ্যিালয়ে জাতীয় শিক্ষা ও গবেষনা অনুষদ বা ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিচার্স (আই ই আর) বিভাগে ভর্তি হয়। অভাব অনটন আর বাধাঁ বিপত্তির পারও পড়াশোনা ধেকে দমে যায়নি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাষ্টার্স শেষ করে চাকুরীর জন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের রিটেন ও ভাইভা পরীক্ষা শেষ করেছে। এখন অপেক্ষো ফলাফলের জন্য। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি কনে হাসনা জানিয়েছেন তার একটি চাকুরীর বিশেষ প্রয়োজন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের একটু সহযোগিতা করলেই হয়তো বাকী জীবনটা আমি আমার ভালবাসার মানুসের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারবো।
অপর দিকে বর আনিসুর রহমানের পিতার নাম তোফাজ্জল হোসেন, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার মনিরকান্দি হলেও বর্তমানে রাজধানী ঢাকার দক্ষিনখান আসকোনা এলাকায় বসবাস করেন। আনিসুর রহমান জানান, মানবিক বিভাগ থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, ২০১৪ সালে এইচএসসি পাশের পর ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে জাতীয় শিক্ষা ও গবেষনা অনুষদ বা ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিচার্স (আই ই আর) বিভাগে ভর্তি হয়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমাদের পরিবার, বিশ^দ্যালয়ের শিখ্ষক মন্ডলী এবং আমাদরে সহপাঠিগন সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাষ্টার্স শেষ করে সমাজ কল্যান বিভাগের অধিনে টঙ্গি অফিসে প্রজেক্টে চাকুরী করছেন। দাম্পত্ত জীবন সম্পর্কে আনিসুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকেই হাসনার সাথে আমার একটি সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা একে অপরকে অনেক পছন্দ ও ভালবাসতাম। বিষয়টি আমরা পরিবারের সদস্যদের জানাই। তাদের সহযোগিতায় ব্যতিক্রমী ও জাঁকজমকপুর্ন ভাবে আমাদরে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা অনেক দুর এগিয়ে যেতে চাই। চাই সকলের সহযোগিতা।
এ ব্যাপারে ১০ নং গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চয় নং ওয়ার্ড মেম্বার মজিবর রহমান, ১০ নং গোড়াই ইউনিয়ন (পশ্চিম) স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি এবং এতিম হলেও কদিম দেওহাটা গ্রামের সোরাইরা বেগম ও ইসরাফিলের সহযোগিতায় সর্বো”্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ^দ্যিালয়ে পড়াশোনা করেছে হাসনা। আমরা তাদরে বিয়ের অনুস্ঠানও জাঁকজমকপুর্ন ভাবে সম্পন্ন করে দিয়েছে। তাদরে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য সরকার নব-দম্পত্তিদের জন্য ভাল একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, ইচ্ছা শক্তি এবং মনোবল থাকলে জীবনে অনেক কিছুই করা সম্ভব যার উজ্জল দৃষ্টান্ত নব-দম্পত্তি আনিসুর ও হাসনা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হলেও তাদের ইচ্ছ শক্তি, পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। তাদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহন করা উচিত। বর্তমান সরকার, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এবং আমার পক্ষ থেকে নব-দম্পত্তিদের জন্য শুভ কামনা, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং তাদরে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।