মির্জাপুরে অভিযান চালিয়ে কাঠ পুড়িয়ে অবৈধ কয়লা তৈরীর ১৩ চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারী বনাঞ্চলের আশপাশে অবৈধ কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর ফলে একদিকে যেমন বনাঞ্চল ধ্বংস করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, তেমনি কয়লার চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত কাল ধোয়ায় এলাকার পুরিবেশ মারাত্বক হুমকির মুখে পরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোপন সংবাদ পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল গতকাল শনিবার (১ জানুয়ারি) আজগানা ইউনিয়নের মহিষপাথান এবং খালপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর অবৈধ ১৩ চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের খবর পেয়ে চুল্লির মালিক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আমিনুর ইসলাম বুলবুল বলেন, গতকাল শনিবার আজগানা ইউনিয়নের মহিষপাথান এবং খালপাড় এলাকায় ১৩ চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে একই ইউনিয়নের কুুড়িপাড়া জলকুটির ও তেলিনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০-১২টি কাঠ পুড়িয়ে অবৈধ কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঐ অভিযানে সময় হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মির্জাপুর উপজেলা বনবিভাগ সুত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৮০০শ হেক্টর সরকারী বন ভুমি রয়েছে। বিশাল এই বন ভুমিতে গজারি, গর্জন, সেগুন, আকাশমনি, পিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান গাছ রয়েছে। এছাড়া সমাজিক বনায়ন কর্মসুচীর আওতায় বনাঞ্চল ও এর আশাপাশে প্রচুর বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে।
আজগানা ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সরকারী বিধান মতে বনাঞ্চলের আশপাশের ১০ কি. মি. এর মধ্যে ইটভাটা, করাত কল এবং কয়লা তৈরীর চুল্লি স্থাপন নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। স্থানীয় কিছু অসাধু চক্রের যোগসাজসে সিন্ডিকেট করেই চলছে কাঠ পুড়িয়ে চুল্লিতে কয়লা তৈরীর অবৈধ ব্যবসা। চুল্লিার কাল ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে পরেছে। চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে মির্জাপুর উপজেলার গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, পেকুয়া, মুচিরচালা, বাঁশতৈল, বংশীনগর, বালিয়াজান, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর, খুইদারচালা, ঘাগড়াই কুড়াতলী ও খাটিয়ার হাটসহ বিভিন্ন এলাকার বনের আশপাশে অবৈধ ভাবে কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরী করে আসছে। শতাধিক কয়লার চুল্লিতে প্রতি দিন ৫-৬ টন কয়লা তৈরী হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। কয়লার তৈরীর ফরে বিষাক্ত কাল ধোয়ায় ঐ সব এলাকায় বসবাস করা হুমকির মুখে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে বনজ সম্পদ ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং আশপাশের গ্রামের গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট হয়ে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পরেছে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগ মির্জাপুর রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জ অফিসার মো. আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন সংরক্ষক এবং সহকারী বন রক্ষক মহোদয়ের নির্দেশনায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, বাঁশতৈল, বংশীনগর, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর ও খাটিয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতিপুর্বে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বেশ কিছু কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আজগানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। বন রক্ষার জন্য তাদের এ অভিযান পরিচালনার সময় বনবিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বনাঞ্চলের ভিতরে ও আশপাশে অবৈধ ভাবে কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর কোন সুযোগ নেই। যখনই খবর পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল টিমের মাধ্যমে কয়লা তৈরীর অবৈধ চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের অভিযান চলমান থাকবে বলে এই দুই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here