মো.সাজজাত হোসেন
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবাধে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। নির্বিচারে পাহাড় কেটে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন নামমাত্র অভিযান চালালেও থেমে নেই পাহাড় কাটা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হলে পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়। মূলত পাহাড় কেটে ইটভাটাগুলোতে মাটি বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা বলে বছরজুড়েই পাহাড় কাটছে একটি চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্নভাবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে কমিশনের বিনিময়ে এই চক্রকে সহায়তা দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে লাখ লাখ জরিমানা করা হয়। অভিযান শেষে আবারও পাহাড় কাটায় ব্যস্ত হয়ে যায় পাহাড় খেকোরা।
এদিকে, দিনের পর দিন পাহাড় কাটায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। অন্যদিকে পাহাড় কাটা বন্ধ না হওয়ায় প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলায় অন্তত ৭০টি পয়েন্টে ভেকু মেশিন দিয়ে পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সহযোগিতায় পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরি কিংবা মেরামতের অজুহাতসহ নানা কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড় ও টিলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আজগানা,বাশঁতৈল,গোড়াই,ফতেপুর ও পৌরসভার ৭০টি পয়েন্টে ভেকু মেশিন দিয়ে পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এইসব কাজের নেতৃত্ব দিছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. মনঞ্জুরুল কাদের বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান আকন্দ,আজগানা ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মোক্তার আলী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বলেন, মির্জাপুর মহাসড়কসহ উপজেলার প্রতিটি অলিগলির রাস্তা এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য ডাম্পার ও মিনি ট্রাকে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া হয়। এসব ট্রাক চলাচল করায় এবং মাটি পড়ে সব সড়কের অবস্থা বেহাল। এতে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনেরর নজরদারি নেই। যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
দলের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ ও সধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার তাহরীম হোসেন বলেন, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। যারা এই বেআইনি কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।
বাংলাদশে পরিবেশ অধিদফতরের টাঙ্গাইল অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওকে জানানো হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরই এসব মাটিখেকো তাদের অবৈধ মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাটি খেকোদের উৎপীড়নে দিশাহারা হয়ে উঠেছে পাহাড়বাসী, ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করলে প্রভাবশালীদের চাপের মুখে পড়তে হয় তাদের। বিভিন্ন স্পটগুলোতে গিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমোদনের বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. মনঞ্জুরুল কাদের বাবুল পাহাড় ও জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির কথা অস্বীকার করে বলেন, পাহাড়ি মাটি ,কৃষি জমির মাটি ও বালি দিয়ে ইট তৈরি করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো.হাফিজুর রহমান বলেন, বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে গত কয়েক দিনে আমি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন পরিবেশ রক্ষার জন্য দলীয় ব্যক্তি হলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।