মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পৌরসভা ও আট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পরেছে। মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যা কবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পরেছে। রাস্তাঘাট ডুবে বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগের জন্য ছাত্রছাত্রীরা নৌকায় ঝুঁকির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ্য রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার ও ব্রিজ কালভার্টের তালিকা হচ্ছে।
আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এ মতিন বলেন, বন্যার পানির কারনে উপজেলার কদিমধল্যা-বরাটি রাস্তা, শুভুল্যা-বরাটি রাস্তা, আছিমতলা-উফুলকী রাস্তা ডুবে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে এলাকার লোকজন চরম বিপাকে পরেছেন। পাহাড়পুর-বুধিরপাড়া, ভাওড়া-কামারপাড়া রাস্তা, ফতেপুর-বাসাইল রাস্তা, মহেড়া-বিলপাড়া রাস্তাসহ বেশ কয়েকটি রাস্তা ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পুষ্টকামুরী উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দারের মধ্যে মাসুম পারভেজ, সহিদসহ একাধিক ভুক্তযোগি অভিযোগ করেছেন ২০-২৫ দিন ধরে পানি বন্ধি জীবন যাপন করলেও আজ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী ভাবে তারা কোন ত্রান সহযোগিতা পাচ্ছে না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে পরেছেন বিপাকে
বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দুর্ভোগের এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭০ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৫ টি, নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় তিনটি, কলেজ ১০ টি ও দাখিল মাদ্রাসা ১৪ টি রয়েছে। মির্জাপুরে বংশাই ও লৌহজং নদীর পানি বাড়তে থাকায় ফতেপুর, মহেড়া, জামুর্কি, বানাইল, ওয়ার্শি, আনাইতারা, বহুরিয়া ও লতিফপুর ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ এখন পানি বন্ধি এবং বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানি রয়েছে। পৌরসভার আলহাজ শফিউদ্দিন মিঞা এন্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজ, গোড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইচাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ড. আয়েশা রাজিয়া খোন্দকার স্কুল এন্ড কলেজ, কদিমধল্যা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগধল্যা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিবিসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুগি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মারিশনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উফুলকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৫০ টি সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা কবলিত।
ভাতগ্রাম ইউনিয়নের সিবিএ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উর্মিলা পাল ও বন্ধ্য কাওয়ালজানি খাদেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও মির্জাপুরে বন্যা পরিস্থিতির কারনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগন পরেছে চরম বিপাকে। ঝুঁকি নিয়ে তারা বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায় পাঠদান করছেন। লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ভাঙ্গনের ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ১৭০ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ আংশিক বন্যা কবলিত হয়েছে। শিক্ষা অফিস থেকে কর্মকর্তাগন এবং শিক্ষকদের সমন্ময়ে প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৫-২০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও এর আশাপাশে পানি উঠেছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত পাঠদান চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি রয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী যেন সমস্যার সম্মুখীন না হয়।