মির্জাপুরে ৪৮ ঘন্টায় চাঞ্চল্যকর পোষাক শ্রমিক নার্গিস খুনের রহস্য উৎঘাটন

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
পোষাক শ্রমিক চাঞ্চল্যকর নার্গিস কাওসার সাদিয়া (৪৩) খুনের রহস্য ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে উৎঘাটন করেছেন পুলিশ। খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুই ঘাতককে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এই খুনের রহস্য উৎঘাটন হয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এটিএম জহিরুল হক আজ বুধবার রাতে নিশ্চিত করেছেন। পাওনা টাকা চাওয়ায় তিন ভাই মিলে পোষাক কারখানার শ্রমিক নার্গিস কাওসার সাদিয়াকে নির্মম ভাবে খুন করে লাশ গুম করার জন্য ফেলে রাখেছিল গভীর জঙ্গলে। ঘটনার এক দিন পর পুলিশ মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের হাটুভাঙ্গা মজিদপুর এলাকার জঙ্গল থেকে লাশউদ্ধার করে।
আজ বুধবার (২২ নভেম্বর) মির্জাপুর থানা পুলিশ সুত্র জানায়, নার্গিস কাওসার সাদিয়া পেশায় পোষাক শ্রমিক। তার পিতার নাম মতিউর রহমান। গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নতুন বান্দুরা মীরের ভাঙ্গী গ্রামে। পরিবারের অভাব মোচনের জন্য গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি আরামবাগ মিতালী ক্লাব এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে পোষাক কারখানায় কাজ করতেন। কারখানায় কাজ করার সময় পরিচয় হয় কাপড় ব্যবসায়ী হাসেমের সঙ্গে। হাসেমর পিতার নাম উজির আলী, গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর গ্রামে। নার্গিসের সঙ্গে পরিচয় এবং বিয়ের প্রলোভনে কাপড় ব্যবসার জন্য নার্গিগের নিকট থেকে ৮ লাখ টাকা ধার নেন হাসেম। এভাবে কেটে গেছে কয়েক বছর। ধার করার টাকাও দিচ্ছে না আবার নার্গিসকে বিয়েও করছে না হাসেম। ধারের টাকা চাওয়া এবং বিয়ের জন্য নার্গিস চাপ দিলে তাদের মধ্যে দ্বন্ধ শুরু হয়। দ্বন্ধের জের ধরে হাসেম ও তার দুই ভাই হান্নান ও হাসান মিলে নার্গিসকে খুনের পরিকল্পনা নেয়। গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে কৌশলে হাসেম বেড়ানোর কথা বলে নার্গিসকে কোনাবাড়ির বাসা থেকে নিয়ে মির্জাপুর উপজেলার আজগানা এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে দুই খুনি হান্নান ও হাসান এবং হাসেম মিলে নার্গিসকে নির্মম ভাবে খুন করে লাশ গুম করার জন্য জঙ্গলের ভিতরে ফেলে পালিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনার পরের দিন স্থানীয় লোকজন লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যানিটি ব্যাগ ও খুনের কিছু আলামত উদ্ধার করে। অজ্ঞাত ভেবে ময়না তদন্ত করে। পুলিশের কাছে খবর পেয়ে নার্গিসের মেয়ে জুইয়ারিয়া জান্নাতি কুমু মির্জাপুর থানায় এসে লাশ সনাক্ত করে। গত ২০ নভেম্বর কুমু বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা নং ১১, তাং-২০/১১/২০২৩.।
এদিকে মামলার সুত্র ও কিছু আলামত সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা এটিএম জহিরুল হক ও আবুল বাশার মোল্লা নার্গিস খুনের রহস্য উৎঘাটনে মাঠে নামেন। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নার্গিস খুনের ৪৮ ঘটনার ব্যবধানে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুনের মুল হোতা হাসেম এবং তার ভাই হান্নানকে গ্রেফতার করেছে। অপর খুনি হাসেমের ভাই হাসান পলাতক। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এটিএম জহিরুল হক বলেন, হাসেমের নিকট পাওনা আট লাখ টাকা চাওয়ায় নার্গিসকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে তিন ভাই মিলে পরিকল্পিত ভাবে নার্গিসকে খুন করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুই খুনি হান্নান ও হাসেম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
এদিকে মামলার বাদী ও নার্গিসের মেয়ে জুইয়ারিয়া জান্নাতি কুমু খুনিদের ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর-নাগরপুর) সার্কেল এএসএম আবু মনসুর মুসার সঠিক দিক নির্দেশনায় তথ্য প্রুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে নার্গিস খুনের রহস্য উৎঘাটন এবং খুনিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here