মির্জাপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমপি শুভকে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও প্রতারক বলায় এলাকায় তোলপার

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু সাংসদ খান আহমেদ শুভ এমপিকে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও প্রতারক বলায় রাজিৈনত মহলে ব্যাপক তোলপার শুরু হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য টক অবদা মির্জাপুরে পরিনত হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও ঘোষনা দিয়েছেন।গত তিন দিন ধরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য সামাজিক যোগ যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হচ্ছে। গত উপনির্বাচনে বিজয়ী সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপিকে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও প্রতারক বলে মন্তব্য করেছেন মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের তিন বার এবং গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বারের চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্ট। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী ও বহিরাগত খান আহমেদ শুভকে নৌকার প্রতীক দিয়ে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুরে আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগনকে সঙ্গে নিয়ে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার (২২নভেম্বর) মির্জাপুর উপজেলার সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সেঙ্গ কথা বলে এমপি-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্ধের বিস্তারিত জানা গেছে।
অনুসন্ধানে ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একজন নিবেদিত প্রান আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা এবং আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এমপি-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্ধের মুল কারন হচ্ছে আওয়ামীলীগের উপজেলা শাখা কমিটি গঠন নিয়ে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও এমপি খান আহমেদ শুভ ও তার অনুসারীরা পরিকল্পিত ভাবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে কমিটি থেকে বাদ দিয়েছেন। এর পর থেকেই তাদরে ম,ধ্যে দ্বদ্ধ শুরু হয়। গত রবিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের লতিফপুর বড়চালা গ্রামে দুই দিনব্যাপী বাউল সংগীত উৎসব অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমপি শুভকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা। এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, টাঙ্গাইল হঠাও, মির্জাপুর বাঁচাও। এটাই আমাদের শ্লোগান। তিনি আরও বলেন, এমপি শুভ এলাকায় থাকেন না। তার বাবাকে নিয়ে তিনি টাঙ্গাইলে অবস্থান করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চার বারের এমপি প্রয়াত একাব্বর হোসেনের মৃত্যুর পর মিথ্যা প্রলোভন ও টাকার বিনিময়ে মির্জাপুরে উপনির্বাচনে এমপি হন। তিনি এমপি হওয়ার পর তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। জনগনের সার্থে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মীর এনায়েত হোসেন মন্টু। আগামী নির্বাচনে পাহাড়ী এলাকা থেকে তিনি প্রার্থী হলে পুরো পাহাড়ী এলাকার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান। উপজেলার গোড়াই, আজগানা, বাঁশতৈল, তরফপুর ও লতিফপুর হচ্ছে লাল মাটির পাহাড়ী এলাকা। এই এলাকা থেকে তিনিই প্রথম নির্বাচন করবেন বলে ঘোষনা দেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় লাল মাটির সন্তান হিসেবে তাকে নির্বাচিত করতে পাহাড় বাসীকে এক হওয়ার আহবান জানান । তিনি বলেন, খান আহমেদ শুভ এমপি বাদে অন্য যে কেউ মনোনয়ন পেলে তিনি সতন্ত্র প্রার্থী হবেন না এটাও ঘোষনা দেন।
এ ব্যাপারে আজ বুধবার বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু এ বিষয়ে বলেন, এমপি শুভ একজন বহিরাগত, দাঙ্গাবাজ ও সন্ত্রাসী। এরাকার জনগনের সঙ্গে তার কোন সম্প্রক্তা নেই। জাকাতের অনুদানের টাকা নিজের নাম ব্যবহার করে জনগনকে ধোকা দিয়ে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য। দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ খান আহমেদ শুভকে দলীয় মনোনয়ন দিলে তিনি এমপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। ইতিমধ্যে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দুই এক দেিনর মদ্যে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু একজন প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও আট বারের চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে আমার কোন ব্যক্তিগত দ্বন্ধ নেই। তিনি আমার ও মির্জাপুরবাসির একজন অভিভাবক। আমি তাকে সম্মান করি। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক এই আসনের প্রথম গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। তিনি মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, আমার দাদা ও বাবার বাড়ির উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার যোগ্যতায় ও বাবার পরিচয়ে উপনির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। দুই বছরের সময়কালে আমি সততার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এমন কোন কাজ করিনি যে কারণে আমাকে কেউ সন্ত্রাসী বলতে পারবে। দলের কাছে পুনরায় মনোনয়ন চেয়েছি। মনোয়ন দিলে নির্বাচন করবো। না দিলে যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়ে কাজ করবো। স্বতন্ত্র নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, কে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে, না করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। বিএনপি নির্বাচনে এলে এক ধরনের নির্বাচন আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে অন্য ধরনের নির্বাচন হবে। কাজেই দল যে ভাবে নির্দেশনা দিবে সেই ভাবেই নির্বাচন হবে। কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here