মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচয় দিয়ে এলাকার ২৫-৩০ জন যুবক-যুবতীদের চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্নসাত করেছেন মো. হারুন অর রশিদ (৪৭) নামে প্রতারক। ভুক্তভোগি যুবক-যুবতীরা ফাঁদ পেতে অবশেষে প্রতারক এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচয়দানকারী সেই হারুন অর রশিদকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। প্রতারক হারুন অর রশিদের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের চুয়াত্তর (চরগুগি) গ্রামে। আজ মঙ্গলবার (২১ মে) মির্জাপুর উপজেলার পাশ^বর্তী দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি গ্রামের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছেন। প্রতারনার শিকার ও ভুক্তভোগি যুবক-যুবতীরা টাকা ফেরতের দাবীতে ও প্রতারক হারুন অর রশিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার পুলিশ সুত্রে জানায়, হারুন অর রশিদ নামে কোন সহকারী পরিচালক (এডি) জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের কোন অফিসে কর্মরত নেই। তিনি ভুয়া নাম ব্যবহার করে প্রতারনা করেছে এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সুনাম খুন্ন করেছেন। তিনি কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কখনো শিক্ষা অধিদপ্তর,মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, সচিবালয়সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের গুরুত্বপুর্ন দপ্তরের নাম ব্যবহার করতেন। পুলিশের হাতে আটকের পর মো. হারুন অর রশিদ জানিয়েছে ৭/৮ বছর পুর্বে মির্জাপুর উপজেলার সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব ও তার আত্বীয়-স্বজনদের মাধ্যমে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পর এনএসআইয়ে তার চাকুরী না হলেও ভুয়া নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন হারুন। এরপর থেকেই এনএসআইসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরী দেওয়ার নামে প্রতারনার ফাঁদ পাতেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকরী শিক্ষক পদের শিক্ষক নিয়োগে নিয়ে একটি চক্রের মাধ্যমে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মির্জাপুর, দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যুবক-যুবতীদের চাকরী দেওয়ার প্রলোভনে ৮-১০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন হারুন। এভাবে অন্ততপক্ষে ২৫-৩০ জন যুবক০যুবতীর নিকট থেকে তিনি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। তার প্রতারনার শিকার জাকুর্মী গ্রামের মাহফুজ হোসেন (২৪), বাওয়ারকুমারজানি মহিলা কলেজ সংলগ্ন লুবনা আক্তার (২৩) এবং যুুগিরকোপা গ্রামের জাকির হোসেন (২৫)সহ অনেকেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রতারক হারুন কাউকে চাকুরী দেয়নি এবং টাকাও ফেরত দেননি।
এদিকে গতকাল সোমবার চাকরী দেওয়ার নামে আবার কয়েকজন যুবক-যুবতীর নিকট টাকা নেওয়ার জন্য প্রতারক হারুন অর রশিদ তার বন্ধুর বাড়ি লাউহাটি গ্রামে যান। এলাকার লোকজন ভুক্তভোগিদের খবর দিলে তারা ঐ বাড়িতে হাজির হয়ে প্রতারক হারুনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এ সময় স্থানীয় লোকজন হারুনের পরিবারকে খবর দিলেও তারা তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেনি। পরে এলাকার লোকজন জাতীয় জরুরী সেবা সংস্থা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হারুনকে উদ্ধার করে মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, আটককৃত হারুন অর রশিদ এনএসআইয়ের ভুয়া সহকারী পরিচালকের নাম ব্যবহার করে এলাকার নিরীহ যুবক-যুবতীদের এনএসআইসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরী দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগিদের মধ্যে ইতিমধ্যে দুইজন কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখন সে মির্জাপুর থানায় আটক রয়েছে। ভুক্তভোগিরা অনেকেই এখন থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।