মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাঁশতৈল ইউনিয়নের কাইতলা বৃহৎ পশুর হাট উন্নয়নের জন্য আওয়ামীলীগের নেতাদের সিন্ডিকেটে ৬৫ লাখ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ০৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. আবুল হোসেন ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল দেওয়ানের নিকট থেকে কাজ ভাগিয়ে নিয়ে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার সঙ্গে সিন্ডিকেট করে এই ৬৫ লাখ টাকা হরিলুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাটের উন্নয়ন না হওয়ায় পশুর হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কাঁদা পানির মধ্যে হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচলের জন্য দুর্ভোগের শেষ নেই। আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) কাইতলা হাটে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ পশুর হাট বাঁশতৈল ইউনিয়নের কাইতলা বাজার। পশুর হাটটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আঞ্চলিক রোড গোড়াই-সখীপুর-ঢাকা রোডের পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্যে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। প্রতি শনিবার এখানে সাপ্তাহিক পশুর হাট বসে। ২০২৩-২০৪ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধিনে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাজস্ব আদায় বাবদ কাইতলা হাটের ইজারা দেওয়া হয় চার কোটি ১০ লাখ টাকা। হাটের ইজারা পান বাঁশতৈল এলাকার ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন মিয়া। কাইতলা হাটের ইজারা দেওয়া চার কোটি ১০ লাখ টাকা থেকে ৬৫ লাখ টাকা হাটের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
এলাকাবাসির মধ্যে রহমান মিয়া, আলমগীল হোসেন, গরু ব্যবসায়ী মিরাজুল ও আশিসহ অন্তত ১৫ জন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগ নেতা ও বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ০৬ নং ওয়ার্ড ম্বোর আবুল হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল দেওয়ানের সঙ্গে আতাত করে কাজ ভাগিয়ে নেন। উন্নয়নের মধ্যে ছিল হাটের চারপাশে ও ভিতরে চলাচলের জন্য কয়েকটি পাকা রাস্তা নির্মান, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মান, হাটের চারপাশে টয়লেট নির্মান, মহিলাদের জন্য গেস্ট হাউজ ও সেট নির্মান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্তা করা, গেস্ট হাউজ নির্মান, মসজিদের উন্নয়ন, যাত্রী ছাউনী নির্মান, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর। ঠিকাদার ও আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি মেম্বার আবুল হোসেন, চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন দেওয়ান, আওয়ামীলীগ নেতা মো. সহিদ মিয়া, শরিফ হোসেন, হাটের ইজারাদার হেলাল উদ্দিন মিয়াসহ উপজেলার আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার সঙ্গে সিন্ডিকেট করে কাইতলা হাটের উন্নয়নের নামে বরাদ্ধকৃত ৬৫ লাখ টাকা হরিলুট করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুত্বপুর্ন এই পশুর হাটের উন্নয়ন না হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা এবং এলাকাবাসির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরেজমিন কাইতলা হাট ঘুরে দেখা গেছে, বরাদ্ধকৃত টাকার উন্নয়ন না হওয়ায় হাটের বেহাল অবস্থা। কাঁদা পানিতে পরিপুর্ন থাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্তা নেওয়ার জোর দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ঠিকাদার আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি মেম্বার আবুল হোসেন বলেন, হাটের উন্নয়নের জন্য বরাদ্ধ পাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন এবং উপরের মহলের নেতাদের সঙ্গে মিলমিশ করে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ করেছি। পরিবেশ অনুকুলে না থাকায় ঠিকমত কাজ করা যায়নি। কিছু কাজ এখনও চলমান আছে।
এ ব্যাপারে ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, কাইতলা বাজারের পশুর হাট টাঙ্গাইলের মধ্যে বৃহৎ পশুর হাট। হাটের ৪ কোটি ১০ লাখ টাকার ইজারা মুল্য থেকে উন্নয়ন করের অংশ থেকে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ ছিল কাইতলা হাটের উন্নয়নের জন্য। ঠিকাদার কাজের কোন অনিয়ম করলে তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি দাবী করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, কাইতলা হাটের উন্নয়ন বাবদ ঠিকাদার কোন অনিয়ম দুর্নীতি করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।