মির্জাপুরে সুইসাইড নোট লিখে নববধু কলেজ ছাত্রীর আত্নহত্যা

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
এই পৃথিবীতে আমি খুবই ক্লান্ত, সবাইকে মুক্তি দিলাম আজ। ভালবাসি সবাইকে, তবে মরার আগে দুঃখ একটাই রয়ে গেল, কেউ আমাকে বুঝলো না। আমি বুঝতে পারছি যে, আমার আর বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে বা প্রয়োজন নেই। মনের গহীনে জমানো বিভিন্ন কষ্টের কথা সুইসাইড নোটে লিখে (কাগজে লিখে) আত্নহত্যা করেছে অর্পনা রাজবংশী মনি নামে নববধু এক কলেজ ছাত্রী। মাত্র সাত মাস আগে তার বিয়ে হয়েছিল। মনির আত্নহত্যার পর থেকেই স্বামী সজল রাজবংশী পলাতক। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়া গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। এটা কি আত্নহত্যা না মনিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মনির এই আত্নহত্যার ঘটনা তার সহপাটী, পরিবার ও এরাকাবাসি কেউ মেনে নিতে পারছে না।
আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মির্জাপুর পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তাপস সাহা এবং মনির প্রতিবেশী লতিফুর রহমান জানান, অর্পনা রাজবংশী মনির পিতার নাম ভরত রাজবংশী। বাড়ি পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়া মাঝিপাড়া গ্রামে। মনি মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। মনির অসহায় পিতা ভরত রাজবংশী এবং বড় বোন বিমলা রাজবংশীসহ বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেন, সাত মাস পুর্বে অর্পনা রাজবংশী মনির বিয়ে হয় সাভার উপজেলার শৈলমাসিন গ্রামের সজল রাজবংশীর সঙ্গে। স্বামী সজল রাজবংশী সাভার ও ঢাকায় স্বর্নের ব্যবসা করতো বলে তারা জানায়। বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন মনির উপর নানা ভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালাত্।ো এক পর্যায়ে বাবা মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে মনির বড় বোন বিমলা রাজবংশী তাকে মির্জাপুর সাহাপাড়া গ্রামের ডা. প্রদীপ কুমার রায়ের বাড়িতে নিচতলায় বাসা ভাড়া করে দেন। এখানে থেকেই মনি কলেজে পড়াশোনা করতো। মনি পড়াশোনা করুক এটা তার স্বামী সজল রাজবংশী এবং তার পরিবার ভাল চোখে দেখতেন না। এ নিয়ে মনির উপর নানা ভাবে নির্যাতন করতো বলে তারা অভিযোগ করেন। প্রতিবাদ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মনির পরিবারকে হত্যার হুমকি দিতো।
এদিকে গতকাল সোমবার রাতে স্বামী ও তার পরিবারের অত্যাচার নির্যাতনের কথা এবং জীবনের বিভিন্ন দিক সুইসাইড নোটে লিখে মনি ভাড়া বাসায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে। আশপাশের লোকজন ঘটনা জানতে পেরে মির্জাপুর থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। আজ মঙ্গলবার ময়না তদন্ত শেষে রাতে মনির লাশ সাহাপাড়া কেন্দ্রীয় স্মশানে দাহ্য করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মনির পিতা বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মনির অসহায় পরিবার, সহপাঠী,ও এলাকাবাসি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার বদিউর রহমান বলেন, লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here