মির্জাপুরে গুলিতে অন্ধ স্কুল ছাত্র হিমেল পৃথিবীর আলো দেখতে চায় মানবেতর জীবন

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
কোটা সংস্কার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে দুটি চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল ছাত্র হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হিমেল (১৭) আবার পৃথিবীর আলো দেখতে চায়। অভাব অনটনের সংসারে হিমেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি। এখন পর্যন্ত সরকারী ভাবে পায়নি কোন আর্থিক সহযোগিতা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১০ নং গোড়াই ইউনিয়নের গোড়াই লালবাড়ি গ্রামে হিমেলের বাড়ি। আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) হিমেলের বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে পরিবারটি করুন চিত্র। ছেলেকে চিকিৎসা করাতে না পেরে তার মা নাসিমা বেগম চোখের পানি ফেলছেন। একই অবস্থা বড় ভাই জনি ও বৃদ্ধা দাদী পরিভানুর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিমেলের পিতার নাম আফাজ উদ্দিন। মা নাসিমা বেগম। হিমেল ও তার বড় ভাই জনিকে রেখে তার বাবা আফাজ উদ্দিন মাকে ফেলে চলে গেছে অনেক আগেই। দরিদ্র ও অসহায় নাসিমা বেগম বাড়ি বাড়ি কাজ করে দুই ছেলেকে আগলে ধরে বাপের ভিটায় কোন রকমে পরে আছেন। কোন দিন খেয়ে আবার কোন দিন না খেয়ে চলে তাদের সংসার। হিমেল গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাশাপাশি ভ্যান গাড়ি চালায়। গত ৪ আগস্ট তার পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। কোটা সংস্কার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়াই সোহাগপাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি গুলাগুলি শুরু হলে হিমেলের মাথায় ও চোখে গুলি এসে লাগে। রাস্তায় আর্তনাত করতে থাকে হিমেল। সন্ধার দিকে স্থানীয় লোকজন হিমেলকে রাস্তার পাশে পরে থাকতে দেখে উদ্ধার করে তার মাকে খবর দেয়। তাকে প্রথমে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসার উন্নিতি না হওয়ায় পরের দিন চিকিৎসকগন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকগন তাকে আবার সিএসএইচ হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে আবার জাতীয় চক্ষু ইন্সটিটিউট হাসতালে পাঠান। চিকিৎসকগন পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর তার পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছেন গুলিতে তার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। তার দুটি চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে হলে অন্ততপক্ষে ১৫-২০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এত অর্থ কোথায় পাবে এই চিন্তায় পরিবারটি এখন দিশেহারা। এখন পর্যন্ত সরকারী ভাবে পায়নি কোন ক্ষতিপুরন। গত আড়াই মাস ধরে পরিবারটি বিভিন্ন জনের কাছে ছোটাছুটি করছে হিমেলকে বাঁচানোর জন্য।
এ ব্যাপারে অন্ধ স্কুল ছাত্র হিমেল জানায়, আমার তো কোন দোষ ছিল না। আমি গরীব পরিবারের সন্তান। পুলিশ অন্যায় ভাবে আমার উপর গুলি ছুড়েছে। পুলিশের গুলিতে দুটি চোখ হারিয়েছি। আমি প্রথিবীর আলো দেখতে চাই। আমি বাঁচতে চাই। তার মা নাসিমা বেগম, বড় ভাই জনি এবং বৃদ্ধা দাদী পরিভানু এই প্রতিনিধিকের কাছে বুকফাঁটা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবার। বাড়ি বাড়ি কাজ করে জীবন চালাই। এখন হিমেলকে নিয়ে আমরা কোথায় যাবো কিছুই বুছতে পারছি না। অর্থের অভাবে চিকিৎসা এখন বন্ধ। যা ছিল তাকে চিকিৎসা ও বাঁচাতে সবই শেষ হয়ে গেছে। আমরা অন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামন্ডলীর সকল সদস্যসহ দেশ ও বিদেশে বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই। হিমেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সোহাগপাড়া বাজারের দক্ষিন দিকে গোড়াই ইউনিয়নের গোড়াই লালবাড়ি। মোবাইল ও বিকাশ নম্বর ০১৮৩০-৮৭২৯০৬।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিমেলের পরিবারটি খুবই অসহায় ও দরিদ্র। ঘটনার পর তার কার্যালয় থেকে হিমেলের পরিবারকে আর্থিক ভাবে কিছু সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোন অনুদান এলে আবার তাকে সহযোগিতা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here