মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে গত ২০-২৫ দিনের ব্যবধানে তীব্র গ্যাসের সংকটে কারখানায় উৎপাদন শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় মিলকারখানায় প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ে দিশেহারা কারখানা কতৃপক্ষ। কবে নাগাদ গ্যাস সংকট সমাধান হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। ফলে বিপুল অংকের ক্ষতির আশংকায় হতাশায় ভুগছে মালিকরা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিবিউশন কোং লি. এর অফিসে বিষয়টি জানানো হলেও তারা গ্যাস সমস্যার সমাধারন দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তীব্র গ্যাস সংকট থাকায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে বিদেশী বায়ারদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পকারখানার কর্মকর্তাগন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিবিউশন কোং লি. এর কর্মকর্তাগন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, গ্যাস লাইনের কমপ্্েরসারের মুল পাইপে গ্যাসের চাপ না থাকায় ও বিভিন্ন স্থানে রক্ষনাবেক্ষনের কাজ হওয়ায় গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) গোড়াই শিল্পাঞ্চলের একাধিক শিল্প কারখানার কর্মকর্তা-মালিক ও শ্রমিক সুত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই শিল্পাঞ্চলে ছোট বড় মিলে শতাধিক মিলকারখানা রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস, নিটিং এন্ড ডাইয়িং, সুতা উৎপাদন কারখানা, টায়ার এন্ড টিউব, সিরামিকস ও গ্লাস ফ্যাক্টরী ইত্যাদি। এসব কারখানায় উৎপাদন মুলত গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। টাঙ্গাইলে র প্রায় ৮০ হেক্টো মিলিয়ন গ্যাসের প্রয়োজন। বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০-৪০ হোক্টো মিলিয়ন। তাও আবার কোন দিকোন দিন পাওয় াযাচ্ছে না। উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কম্পিট কম্পোজিট নীট লি., কম্পিট কম্পোজিট স্পিনিং মিলস, কম্পিট কম্পোজিট গার্মেন্ট, নাহিদ কটন মিলস লি. ডেলসি কটন স্পিনিং মিলস লি. উত্তরা স্পিনিং মিলস লি. টেকনো স্পিনিং মিলস লি. নিউটেক্্র নীট কম্পোজিট লি. সাউথ ইস্ট টেক্্রটাইলস স্পিনিং মিলস লি. সাউথ ইস্ট গার্মেন্টস লি, ইয়ুৎ স্পিনিং মিলস লি. বেঙ্গল এনএফকে লি, খান গার্মেন্টস লি. মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাসটিজ লি. মন্ডল গ্রুপ অব লি. নাসির গ্রুপ অব ইন্ডসটিজ লি. শিরীন স্পিনিং মিলস, নিউটোন গ্রুপ অব লি. বাডর্স গ্রুপ অব লি. উল্লেখ্যযোগ্য। এসব শিল্পকারখানায় প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক চাকুরী করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ না থাকায় উৎপাদন শুন্যের কোঠায় নেমে মিল বন্ধ হয়ে শ্রমিকদের চাকুরী হারাতে হচ্ছে। এছাড়া মালিক পক্ষও শতশত কোটি টাকার লোকসানে বলে কারখানার মালিক-কর্মকর্তা এবং শ্রমিকগন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কম্পিফিট কম্পোজিট নীট লি. এর সিইওি ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু কাউসার এবং জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. ফারুক হোসেন বলেন, গোড়াই শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের তীব্র সংকট থাকায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে প্রতি মাসে তাদের শতশত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রতি দিন গড়ে ১২-১৫ ঘন্টাই গ্যাসের অভাবে মেশিনের চাকা ঘুরছে না। উদৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট থাকায় এই কারখানায় কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ করার পরও তারা বিষয়টির দিকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে কারখানার মালিকপক্ষ শতশত কোটি টাকার ব্যাংক ঋনে জর্জরিত হয়ে পরেছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার কারখানাসহ গোড়াই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মচারীর চাকুরী হারিয়ে বেকার হবার পথে বসেছে। একই অভিযোগ করেছেন, উত্তরা স্পিনিং মিলস, টেকনো স্পিনিং মিলস, কম্পিট কম্পোজিট, সাইথ ইস্ট টেক্্রটাইল ও নিউটেক্্র গ্রুপ অব ইন্ডাসটিজের কর্মকর্তা মালিকদের। গার্মেন্টর্স ও শিল্পাখাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শিল্প মালিকদের সংগঠন গোড়াই-কালিয়াকৈর-কোনাবাড়ি ইন্ডাসটিয়াল ফোরামের সভাপতি বিধান রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই, কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি এলাকায় কয়েক শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন ধরে মুল লাইনে গ্যাসের চাপ নেই। দিন রাত মিলে ২-৩ ঘন্টাও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে যোগ হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। উৎপাদন না হওয়ায় তাদের শতশত কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বিদেশী বায়ারদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। সেই সঙ্গে কারখানায় কর্মরত প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর চাকুরী চলে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিষয়টির দিকে সরকারের উচ্চ পর্যায় এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিউিশন কো. লি. টাঙ্গাইল জোনাল অফিসের ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম বলেন, গ্যাস সরবরাহ করেন জিডিসিএল। তারা গ্যাসের রেশনিং সিষ্টেম চালু করেছেন। কমপ্রেসারের মুল লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় শিল্পে নয় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রয়োজন মাফিক তারা গ্যাস পাচ্ছেন না। গোড়াই শিল্পের মালিকদের পক্ষ থেকে গ্যাস না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।