মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
দক্ষিন আফ্রিকায় প্রেমিক স্বামীর হাতে খুন হওয়া শান্তার লাশ আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দেশে এসেছে। শান্তার পরিবার লাশ নিয়ে মির্জাপুর থানায় আসেন। সেখানে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. শাজাহান মিয়া।
জানা গেছে, প্রেম করে বিয়ে করার এক বছরের মাথায় দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রেমিকার হাতেই শান্তা ইসলাম (২৩) নির্মম ভাবে খুনের শিকার হয়েছে। শান্তা খুন হওয়ার দুই দিন পর দক্ষিন আফ্রিকা পুলিশ ঘাতক সুমন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। খুনের শিকার শান্তা ইসলামের পরিবার অভিযোগ করেছে তার স্বামী সুমন মিয়া (৪০) মোটা অংকের টাকা না পেয়ে গত (২৮ আগস্ট) শান্তাকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মম ভাবে খুন করেছে। শান্তার খুনের খবর দেশে তার গ্রামের বাড়িতে আসলে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা শোকে পাথর হয়ে গেছে। শান্তার পিতার নাম আব্দুস সালাম সিকদার। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামে। আগামীকাল শনিবার দেশে আসছে শান্তার লাশ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ মিয়া জানান, ঘাতক সুমন মিয়া প্রায় প্রায় এক যুগ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার লাইটেন বার্গ শহরে ব্যবসা করতে যান। সুমন ও শান্তার পরিবারের সঙ্গে আত্বীয়তার সুত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত এক বছর পুর্বে বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে সুমন মিয়ার সঙ্গে মির্জাপুর উপজেলার থলপাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম সিকদারের মেয়ে শান্তার মোবাইলে বিয়ে হয়। গত ৫-৬ মাস পুর্বে শান্তাকে সুমন দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে যায়। শান্তার পিতা আব্দুস সালাম অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা বাড়ানোর জন্য শান্তার স্বামী সুমন মিয়া মোটা অংকের টাকা দাবী করে। ধার দেনা করে সাত লাখ টাকাও নেন।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট শান্তার স্বামী সুমন ২/৩ দিনের মধ্যে শান্তার বাবাকে আরও দশ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা না পাঠালে শান্তার অবস্থা খারাপ হবে বলে হুমকি দেয়। ২৮ আগস্ট রাতে ঘাতক সুমন শান্তাকে পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং ধারালো অস্্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ঘটনাটি স্থানীয় পুলিশকে ঘটনাটি জানালে পুলিশ বাসা থেকে শান্তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই ঘাতক সুমন পলাতক বলে জানা গেছে। শান্তার পরিবার ও এরাকাবাসি ঘাতক সুমনকে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে শান্তার পিতা আব্দুস সালাম ও তিন নম্বর ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, মোটা অংকের টাকা না পেয়েই ঘাতক সুমন মিয়া শান্তাকে নির্মম ভাবে খুন করেছে। শান্তা খুনের দুই দিন পর দক্ষিন আফ্রিকা পুলিশ ঘাতক সুমন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। আজ শনিবার শান্তার লাশ দেশে আনা হয়েছে। শান্তার পিতা বাদী হয়ে সুমনকে প্রধান আসামী করে হত্যা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। শান্তার পরিবার ও এলাকাবাসি ঘাতক সুমন মিয়ার ফাঁসির দাবী জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. শাজাহান মিয়া বলেন, দক্ষিন আফ্রিকা থেকে লাশ আসার পর সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। পরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর মামলা হবে।