মির্জাপুরে সালমানের আত্নহত্যা প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবীতে মানব বন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গ্রাম্য শালিসে মাতাব্বরদের হাতে নির্যাতনের শিকার ডিএম সালমান (১৬) নামে এসএসসি পরীক্ষার্থী বিষপানে আত্নহত্যা করেছে। উপজেলার জামুর্কি ইউনিয়নের চুকুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। সালমান বানাইল ইউনিয়নের জনতা গল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সালমানের পিতার পিতার মো. শাসসুল আলম দেওয়ান। গ্রামের বাড়ি আজগানা ইউনিয়নের কুড়াতলী গ্রামে। মাকে নিয়ে সে চুকুরিয়া গ্রামে নানার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতো।
এদিকে আজ রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ডিএম সালমান আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সালমানের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের গল্লি জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিদ্যালয় চত্বর ও পাকুল্যা-লাউহাটি সড়কে তারা এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী সকাল থেকেই বিদ্যালয় চত্বরে সমবেত হতে থাকে। পরে ডিএম সালমান আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শান্তির দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পাকুল্যা-লাউহাটি সড়কের গল্লি বাজার প্রদক্ষীণ করে বিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে ব্ক্তব্য রাখেন, সালমানের মামাতো ভাই জামুর্কী ইউনিয়ন আ.লীগের সাংগঠিনিক সম্পাদক উজ্জল হোসেন খান, সালমানের সহপাটী রবিন, সজিব ও শৈশব। বক্তারা বলেন, সালমানের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীরা এলাকার কথিত মাতাব্বর। একটি তুচচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা সালমানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই প্ররোচনাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
সালমানের সহাপাঠি ও চুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল হোসেনসহ একাধিক ব্যাক্তি জানায়, সালমান এবং তার বন্ধু আলামিন চুকুরিয়া গ্রামের শফিকুলের দোকানে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতো। গত কয়েক দিন পুর্বে দোকানদার শফিকুলকে টাকা না দিয়ে সালমানের বন্ধু আলামিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। দোকানদার শফিকুল টাকার জন্য সালমানকে চাপ দেয় এবং গ্রামের মাতাব্বরদের কাছে বিচার দাবী জানায়। এ নিয়ে গত ৩১ আগস্ট চুকুরিয়া গ্রামের সেকান্দার মিয়ার বাড়িতে গ্রাম্য শালিসের আয়োজন করা হয। শালিসে সালমানকে ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং টাকার জন্য একটি ঘরে আটকিয়ে রাখা হয়। শালিসে সেকান্দার, আব্দুল লতিফ ও সাইফুলসহ ১৫-২০ জন মাতাব্বর ছিল।
অপর দিকে ঘরে আটক থাকা অবস্থায় সালমান এই ঘটনা চুকুরিয়া গ্রামের মামুন নামে এক যুবককে মোবাইল জানায়। মামুন এসে তাকে উদ্ধার করে। নির্যাতনের শিকার সালমান পরের দিন বিষপানে আত্নহত্যার চেষ্টা করে। বাড়ির লোকজন আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জামুর্কি সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে সালমান মারা যায়। ঘটনার পর থেকেই গ্রাম্য ঐ মাতাব্বরগন গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সালমানের সহপাঠি, শিক্ষক, পরিবার এবং একাবাসি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার এসআই মো. আবু সাইদ বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here