মির্জাপুরে শিল্পপার্ক স্থাপনে সরকারী খাস জমি উদ্ধারে বিশেষ উচ্ছেদ অভিযান

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধিনে শিল্পপার্ক স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহনে ৩৩ ভূমিহীন পরিবারকে আজ বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) উচ্ছেদ করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি ও মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমানের দিক নির্দেশনায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান, মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং বিসিক শিল্পনগরী পার্ক স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন। ক্ষতিপুরন না পেয়ে উচ্ছেদ হওয়া কয়েক শতাধিক ভূমিহীন অসহায় পরিবার খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উচ্ছে অভিযানে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেছেন, সরকারী খাস জমিতে তারা দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে বসবাস করে আসছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করার পরও তারা খাস জমি থেকে সরে যাননি। সরকারী নির্দেশনায় তাদের উচ্ছে করা হলেও ৩৩ পরিবারকে বসবাসের জন্য বিনামুলে জমি ও ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হবে এবং তাদের বিষয়ে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার গোড়াই মমিননগর এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলোর মধ্যে সাত্তার, তাহের মিয়া, জিয়ারুল, হাসেম, আরিফা বেগম, আছমা বেগম, হাসিনা বেগম, মালেক ও আলহাজ¦ মিয়াসহ অসহায় ৩৩ পরিবার জানান, মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মমিননগর মৌজায় ৩০৯ নং ক্ষতিয়ানের সাবেক দাগ নং ৩০৪৫ এবং বর্তমান দাগ নং ২৩৭২ এ জমি ক্রয় করে যুগ যুগ ধরে তারা বসবাস করে আসছেন। যারা বসবাস করছেন তারা সবাই অতি দরিদ্র, দিনমজুর ও অনেকেই ভিক্ষাবৃতি করে জীবন নির্বাহ করে আসছে। তাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবী করেন। আমাদের এই ভিটেমাটি টুকুই শেষ সম্বল। তারা অভিযোগ করেন আমাদের কোন ক্ষতিপুরন ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করেই ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিমের সহায়তায় ভোল্ডডোজার নিয়ে বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাড়াবো তার কোন ঠিকানা নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোজার ঠাই পাওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রনালয় ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট মানবিক সহায়তা চাই।
এদিকে টাঙ্গাইল জেরা প্রশসকের কার্যালয় এবং উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, এলাকার বেকারদের জন্য অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মমিননগর মৌজায় ৪৯ দশমিক ৩৫ একর জমির উপর বিসিক শিল্প পার্ক (শিল্প নগরী) স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালে জমি অধিগ্রহন শুরু করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহন, ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার এবং বেশ কিছু জমির মালিকদের ক্ষতিপুরন দেওয়া শুরু হয়েছে। যারা ক্ষতিপুরন দাবী করছে এই জমি সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত। তারা বেআইনী ভাবে যুগযুগ ধরে সরকারী খাস জমিতে বসবাস করে আসছিল। বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও তারা জমি ছাড়তে রাজি হয়নি। নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান করা হলেও ঐ ৩৩ পরিবারকে পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা বিনামুল্যে জমিসহ ঘর পাবেন। এ বিষয়ে সকল প্রস্তিুতি নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উচ্ছেদ অভিয়ান পরিচালনার প্রধান সমন্ময়ক ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় বিসিক শিল্পনগরীর (শিল্পপার্ক স্থাপনের জন্য) স্থানে যারা সরকারী খাস জমিতে অবৈধ ভাবে বসবাস করেছিলেন সেই সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার হয়েছে। কারও প্রতি কোন অন্যায় করা হয়নি। সরকারী নিয়ম মেনেই উচ্ছেদ পরিচালনা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রল্পের আওতায় বিসিক শিল্পপার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত নির্মানের জন্য অবৈধ ভাবে বসবাস কারীদের জেলা প্রশসক মহোদয়ের সহযোগিতায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে শিল্পপার্ক স্থাপন হলে পুরো এলাকায় নতুন দিগন্তের সুচনা হবে। যাদের উচ্ছদ করা হয়েছে তাদরে পুর্নবাসন করা হবে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেরা নির্বাহী অীফসার মো. হাফিজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মমিননগর এলাকায় বিসিক শিল্পপার্ক নির্মান হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ঐ এলাকায় জমি অধিগ্রহনসহ মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এটির নির্মান কাজ শেষ হলে এলাকায় নতুন দিগন্তের সুচনা হবে। যাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে তারা ক্ষতিপুরন পাচ্ছেন। যারা ক্ষতিপুরন পাচ্ছেন না তাদের জমির বৈধ কাগজপত্র নেই। যেহেতু পরিবারগুলো দরিদ্র তাদের উচ্ছদ করা হলেও জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন দেওহাটা এলাকায় তাদের অর্থ, জমি ও ঘরসহ পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here