মির্জাপুরে গৃহবধু স্বপ্নার খুনের রহস্য উৎঘাটন,মুল ঘাতক দুলাল পালিয়ে গেছে সিংগাপুর

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চাঞ্চল্যকর গৃহবধু স্বপ্নার খুনের রহস্য উৎঘাটন হয়েছে। খুনের পর মুল ঘাতক স্বপ্নার স্বামী দুলাল মিয়া পালিয়ে গেছে সিংগাপুর। পুলিশ খুনের সঙ্গে জড়িত স্বপ্নার শ^শুর মুকাররম আলীর পুত্র আব্দুস সালাম মিয়া (৬৫) এবং আব্দুল মান্নানের ছেলে ও স্বপ্নার চাচা শ^শুর শফিকুল ইসলামকে (৪০) গ্রেফতার করেছে। তাদের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার টাকিয়া কদমা গ্রামে। গ্রেফতারের পর তাদের চার দিনের রিমান্ডে এনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রাসেদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মির্জাপুর উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, দেড় বছর পর ডিএনএ পরীক্ষায় কঙ্কালের দাঁত দেখে গৃহবধ স্বপ্নার লাশের সনাক্ত হয়। স্বপ্নার স্বামী দুলাল মিয়া সিংগাপুরে পলাতক। এ ব্যাপারে গত (২০ সেপ্টেম্বর) স্বপ্নার মা জুলেখা বেগম বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ২০২৪ সালের ৫ মে মহেড়া ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের বিল থেকে স্বপ্নার লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করে মির্জাপুর থানা পুলিশ
জানা গেছে, স্বপ্নার সঙ্গে তার স্বামী ও শ^শুর বাড়িরে লোকজনের মধ্যে বনিবনা ছিল না। এ নিয়ে স্বামী ও পরিবারের লোকজনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ গতো। তাদের সংসারে দুইজন সন্তান থাকায় দুই পরিবার চেষ্টা করে ঘটনার কোন মিমাংশা করতে পারেনি। মির্জাপুর থানায় মামলার সুত্র থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২২ জুলাই নিখোঁজ হন গৃহবধূ স্বপ্না। খবর শুনে ঘটনার পরের দিন স্বপ্নার স্বামী দুলাল মিয়া বিদেশ থেকে বাড়ি চলে আসেন। বিদেশ থেকে ফিরে এসে তার স্বামী দুলাল মিয়া দাবী করেন, বিদেশ থেকে পাঠানো বিপুল পরিমান অর্থ, স্বর্নালংকারসহ মালামাল নিয়ে পরকীয়ার জেরে স্বপ্না পালিয়ে গেছে। রিমান্ডে দুই ঘাতক পুলিশকে জানিয়েছে স্বপ্নার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল সাজানো নাটক। স্বপ্না যে দিন নিখোঁজ হয় তার আগের দিন স্বামী দুলাল মিয়া সিংগাপুর থেকে বাড়ি আসে। বাড়িতে না গিয়ে রাতের বেলায় বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী স্বপ্নাকে খুন করে লাশ গুম করার জন্য তার বাবা ও চাচার সহযোগিতায় তেলিয়া বিলে নিয়ে বস্তায় বালি বেঁধে ফেলে আসে। ঘটনার পরের দিন ঘাতক স্বামী দুলাল মিয়া পালিয়ে সিংগাপুর চলে যায়। ২০২৪ সালের ৫ মে তেতুলিয়া বিলের মাঝে এলাকাবাসি এক গৃহবধুর কঙ্কাল দেখতে পান। পুলিশ খবর পেয়ে কঙ্কাল উদ্ধার করে ।
এদিকে কঙ্কালের গলায় একটি তাবিজ দেখে নিজের মেয়ে দাবী করেন স্বপ্নার মা জুলেখা বেগম। দীর্ঘ দিন পর কঙ্কাল ও তার বাবা মায়ের রক্ত নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষায় কঙ্কালের দাঁত দেখে নিশ্চিত হন এই লাশ ছিল স্বপ্না আক্তারের। স্বপ্নার মা জুলেখা বেগমসহ তার পরিবারের দাবী স্বপ্নাকে তার স্বামী দুলাল মিয়া ও শ^শুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিত ভাবে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য তেতুলিয়া বিলের মধ্যে ফেলে রেখেছিল। তারা খুনিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী করেন। স্বপ্নার মা জুলেখা বেগম বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর মির্জাপুর থানা পুলিশ শ^শুর আব্দুস সালাম মিয়া ও চাচা শ^শুর শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। স্বপ্নার স্বামী দুলাল মিয়া এখনও সিংগাপুরে পলাতক।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রাসেদুল ইসলাম আজ শুক্রবার বলেন, স্বপ্নার হত্যা ছিল পরিকল্পিত ও সাজানো নাটক। ঘটনার আগের দিন তার স্বামী দুলাল মিয়া সিংগাপুর থেকে বাড়িতে এসে স্ত্রী স্বপ্নাকে নির্মম ভাবে খুন করে তার বাবা সালাম মিয়া ও চাচা শফিকুলকে সঙ্গে নিয়ে লাশ গুম করার জন্য তেতুলিয়া বিলে বস্তায় বালি দিয়ে ফেলে যায়। পরের দিন দুলাল মিয়া আবার সিংগাপুরে পালিয়ে যায়। রিমান্ডে দুই ঘাতক স্বপ্নার শ^শুর সালাম মিয়া ও চাচা শ^শুর শফিকুল বিস্তারিত জানিয়েছেন। রিমান্ডে খুনের রহস্য উৎঘাটন হওয়ায় দুই আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সিংগাপুরে পলাতক মুল ঘাতক স্বামী দুলাল মিয়াকে আইনী প্রক্রিয়া বিদেশ থেকে এনে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

  • সাপ্তাহিক বারবেলা ডেস্ক

    Related Posts

    মির্জাপুরে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রধান শিক্ষক মর্তুজ আলী খানের ইন্তেকাল

    মির্জাপুরে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *