মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
এক সঙ্গেই দুই ভাইয়ের বেড়ে উঠা এবং সৌদিআরবে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে এক সঙ্গেই দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অনাহার অর্ধাহারে অসহায় এই পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে শোকের মাতম। অভাব অনটনের মধ্যে সংসারের ভরণ পোষণ মেটাতে এবং নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করে সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে দুই ভাই এক সঙ্গের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকা স্তব্দ হয়ে গেছে। বড় ভাই নজরুলের লাশ গত ৬ সেপ্টেম্বর দেশের বাড়িতে এসেছিল প্রভাসিদের সহযোগিতায়। আর ছোট ভাই আমিনুরের লাশ গত ৪ অক্টোবর দেশে এসেছে সেই প্রভাসিদের সহায়তায়। তাদের বুক ফাঁটা আর্তনাতে চার পাশের বাতাস ভারি হয়ে আসছে। তাদের শান্তনা দেওয়ার মত ভাষা যেন কারও নেই। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ২ নং জামুর্কি ইউনিয়নের কদিমধল্যা গ্রামে সৌদি আরবে দুই ভাইয়ের এক সঙ্গে মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার কদিমধল্যা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুই ভাইয়ের লাশ কবরে পর পর দাফন হলেও স্বজনসহ এলাকাবাসির বুক ফাঁটা আর্তনাত যেন থামছে না। সৌদি আরবের কোম্পানী, সৌদি আরবের সরকার প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারসহ দুতাবাসের পক্ষ থেকে এই পরিবারকে দেওয়া হয়নি কোন আর্থিক সহযোগিতা।
জামুর্কি ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মো. সাজন মিয়া জানান, কদিমধল্যা গ্রামের খবির উদ্দিনের দুই ছেলে নজরুল এবং আমিনুর। নজরুল বড় এবং আমিনুর ছোট। দুই জনের মধ্যে অনেক মিল থাকায় এক সঙ্গে স্কুলে পরাশোনা, ঘুমানো, খেলাধুলাসহ সকল কাজকর্ম এক সঙ্গেই করতো। অস্বচ্ছল পরিবারের ভরণ পোষণ মেঠাতে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য ভিটেমাটি বিক্রি ও ধারদেনা করে বাবা-মা ও স্ত্রী সন্তান রেখে গত চার বছর পুর্বে বড় ভাই নজরুল সৌদি আরবে যান শ্রমিকের কাজের জন্য। এর কিছু দিন পর ছোট ভাই আমিনুরকে সৌদি আরবে নিয়ে যায় নজরুল। গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকে সৌদি আরবে কাজ করার সময় স্টোক জনিত কারনে (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে) নজরুল মৃত্যু বরণ করে। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পরে ছোট ভাই আমিনুর। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে ও দেশে পরিবারের কথা ভেবে কয়েক দিন পর ছোট ভাই আমিনুরও স্টোক করে (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে) সৌদি আরবেই মৃত্যু বরণ করেন। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর তার নিজ গ্রাম কদিমধল্যা ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এসে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। প্রতি দিন শতশত লোকজন ঐ বাড়িতে এসে ভিড় জমাতে থাকে। সৌদি আরবে এলাকার প্রভাসিদের সহায়তায় গত ৬ সেপ্টেম্বর ভড় ভাই নজরুলের লাশ দেশে আসে। ঐ দিন সকাল নয়টায় নামাজে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। ছোট ভাই আমিনুরের লাশ কবে বড় ভাইয়ের লাশ আসার ঠিক এক মাস পরে গত ৪ অক্টোবর প্রভাসিদের সহায়তায় ছোট ভাই আমিনুরের লাশ দেশে এসেছে। সৌদি আরবেরর কোম্পানী, সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারসহ দুতাবাসের পক্ষ থেকে অসহায় এই পরিবারের পাশে এসে দাড়ায়নি এবং কোন আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নজরুল ও আমিনুর অসহায় বৃদ্ধ বাবা খবির উদ্দিন বলেন, দুই ছেলেকে হারিয়ে আমি এখন পাগলের মত জীবন যাপন করছি। অভাব অনটনের সংসারে বড় ছেলে নজরুলের স্ত্রী ও সন্তান এবং ছোট ছেলে আমিনুরের স্ত্রী ও দুই সন্তানের এখন কি হবে কোথায় গিয়ে দাড়াবে তাদের শান্তনা দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই। সৌদি আরবেরর সরকার, বাংলাদেশ ও সৌদি দুতাবাস, বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিকট অসহায় এই পরিবারের সাহায্যের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দুই নং জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এ মতিন বলেন, দরিদ্র পরিবারের পরিবারের দুই ভাই এক সঙ্গে মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। দুই ভাইয়ের মৃত্যু হলেও সৌদি সরকার প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারসহ দুতাবাস থেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। তবে ইউপি পরিষদ থেকে তাদের সহযোগিতা দেওয়া হবে বরে তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, জামুর্কি ইউনিয়নের কদিমধল্যা গ্রামের দুই ভাই সৌদি আরবে স্টোক জনিত কারনে মৃত্যু বরণ করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। দুই ভাইয়ের এক সঙ্গে মৃত্যুর বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রণালয়, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে পরামর্শ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি অবহিত করে অনুদানের ব্যবস্থা করা গেলে পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।







